নীহার মোশারফ।।
কার্তিক গিয়ে অগ্রহায়ণের প্রায় মাঝামাঝি সময়। আসেনি শীতকাল। অথচ এখনই ভোলার গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রভাব। সন্ধ্যা হলেই দেখা মিলে দুই গ্রামের মধ্যেখানি জায়গায় কুয়াশার রং। ধোঁয়াটে আকাশ। হেমন্ত থাকাকালিনই যেন জড়াগ্রস্ত শীতের ধূসর রূপ দেখতে পাচ্ছে খেটেখাওয়া মানুষ। ঘরে ঘরে গরম পোশাক গায়ে জড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। শহরের শপিংমলগুলোতে গরম কাপড় কেনাকাটায় ভিড় করছে ছেলে বুড়ো সবাই। ভোলা জেলা ছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র কুয়াশায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। শীত শীত অনুভূত হচ্ছে তরুণদের মাঝে। ঠক ঠক করে কাঁপছে বুড়ো-বুড়িরা। পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে।
পাখির কলকাকলিতে মুখরিত চরের আশপাশ। বিশেষ করে চর কুকরি-মুকরি, তারুয়া দ্বীপ, মদনপুর (মাঝের চর), ঢালচর, কলাতলীর চর, চর নিজাম, চর পাতিলা, চর চটকিমারা, চর শাজাহানসহ অন্যান্য চরে জুলফি, পানচিল, গাঙ্গচিল, বালিহাঁস, সোনাজিরিয়া, লেঞ্জহাঁস, সিথিহাঁস, খুন্তেহাঁস, কালোমাথা গাঙ্গচিল, মেটে রাজহাঁসসহ অসংখ্য পাখির দেখা মিলে চরাঞ্চলগুলোয়। পর্যটকগণ আসতে শুরু করেছেন ভোলার দর্শনীয় স্থানগুলোয়।
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোলার ঢালচর ও চর কুকরি-মুকরিতে এমন কিছু পাখির প্রজাতি আছে যা পৃথিবীর অনেক দেশেই সেসব পাখি দেখা যায় না। ঢালচর ও চর কুকরি-মুকরি বিপন্ন প্রজাতির পাখির এক অভয়ারণ্য। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে ঘুরে দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায় আদি প্রজাতি ও ফার্মের পাতিহাঁস নিয়ে বসে আছে বিক্রেতারা। প্রতিবছর শীতকে উপলক্ষ্য করে ভোলার হাট-বাজারে কয়েক কোটি টাকার হাঁস বেচাকেনা হয়। অতিথি-আপ্যায়ণে, বিয়ের অনুষ্ঠানে, খাবার হোটেলে, উৎসব-পার্বণে পাতিহাঁস ও চালের গুঁড়োর রুটি বেশ মুখরোচক খাবার হয়ে ওঠে। আগাম শীতে গাছ থেকে ঝরতে শুরু করেছে বিবর্ণ পাতা। এখনই শীতের ভয়ে রাত ৮টার পর গ্রামের ছোট ছোট হাট-বাজারে লোকজন তেমন একটা দেখা যায় না।
জনশূন্য শীতের রাত থাকে ভোরের প্রতীক্ষায়। ভোলার বিভিন্ন জায়গায় ফসলি জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। কৃষকরা আশায় আছে কবে ঘরে তোলবে দেশের মাটির মতোই খাঁটি সোনালি ধান। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তারা। গ্রামের শিশুরা সকালে এক টুকরো রোদের পিপাসায় বিভোর হয়ে থাকে। এমন পরিচিত দৃশ্য ভোলার অনেক গ্রামেই দেখা মিলে।