শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

রিপোর্টারের ডায়েরি : গুরুর সাথে একদিন

আযাদ আলাউদ্দীন ।।
আমার সাংবাদিকতার গুরু হলেন দৈনিক নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর। এজন্য আমি আমার লেখা প্রথম বই ‘সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে’ গুরুকে উৎসর্গ করেছি। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকা বাজারে আসে ২০০৪ সালে। কিন্ত তাঁর সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৮ সাল থেকে। তিনি তখন দৈনিক সংগ্রামের চিফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেবছর দৈনিক সংগ্রাম ভবনের আল ফালাহ মিলনায়তনে সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি। তিনদিনব্যাপী ওই কর্মশালার অন্যতম প্রশিক্ষক ছিলেন সালাহউদ্দিন বাবর। তাঁর ক্লাসের লেকচারগুলো এখনো স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে।
ঢাকার সেই কর্মশালা থেকেই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বরিশাল ফিরে এসেও বাবর ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখি। তখন যেহেতু মোবাইল ছিলোনা- সেজন্য আমাদের যাবতীয় যোগাযোগ হতো চিঠির মাধ্যমে। আমি সাংবাদিকতা বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ চেয়ে বাবর ভাইয়ের কাছে চিঠি লিখতাম, তিনি আবার ফিরতি চিঠিতে আমাকে সাংবাদিকতা বিষয়ক বিভিন্ন গাইডলাইন দিতেন। তখন আমি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করতাম অর্থাৎ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ফিচার লিখতাম।
২০০১ সালে একবার তিনি পরামর্শ দিলেন- যেহেতু সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছো, সেজন্য সম্ভব হলে অনার্স শেষ করে স্থানীয় কোন পত্রিকায় জয়েন করো। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আমি অনার্স শেষ করে বরিশালের দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকায় যোগদান করলাম। আমার যোগদানের খবরে তিনি দারুন খুশি হলেন। দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার টিঅ্যান্ডটি টেলিফোন নম্বর তাকে দেয়ার পর- তিনি মাঝেমধ্যে টেলিফোনে আমার খোঁজ নিতেন। আমিও আমার নিজের নামে প্রকাশিত বাইলাইন স্টোরির ‘পেপার কাটিং’ কুরিয়ারের মাধ্যমে তাকে পাঠাতাম। চার বছরে পর্যায়ক্রমে আমি দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার, চিফ রিপোর্টার ও বার্তা সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পাই। প্রতিটি পদোন্নতিতে বাবর ভাই খুশি হন এবং আমাকে উৎসাহ দেন।
২০০৪ সালে বাজারে আসার প্রায় এক বছর আগে দৈনিক সংগ্রাম ছেড়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন আমার সাংবাদিকতার গুরু সালাহউদ্দিন বাবর। নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দিলেও তিনিই হলেন দৈনিক নয়া দিগন্তের সকল সাংবাদিকের কেন্দ্রবিন্দু বা ‘কম্পাস’। নয়া দিগন্তের প্রত্যেক কর্মীকে যিনি সবসময় ভালোবেসে ছায়া দিয়ে আগলে রাখেন। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মীর কাশেম আলী সম্পাদক নিয়োগ থেকে শুরু করে নয়া দিগন্তের যাবতীয় বিষয় দেখাশোনার দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন সালাহউদ্দিন বাবর ভাইয়ের ওপর।
বাবর ভাইয়ের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে অনেক প্রতিষ্ঠিত এবং নামকরা সাংবাদিক নয়া দিগন্তে যোগ দেন। ঢাকার বাইরে সাংবাদিক নিয়োগের জন্য দায়িত্ব পান তৎকালীন মফস্বল বার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বরিশালে এসে প্রথমে আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ব্যুরো চিফ হিসেবে আমার চেয়েও সিনিয়র কাউকে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তখন সাইফুল ভাইকে সিনিয়র সাংবাদিক আনিসুর রহমান খান স্বপনকে বরিশাল ব্যুরো চিফ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করি। সে মোতাবেক আমরা আনিস ভাইয়ের সাথে দেখা করি। কিন্তু তিনি ইংরেজি পত্রিকা ‘নিউ এজ’ ছেড়ে নয়া দিগন্তে যোগদানের অফার বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দেন। একই সাথে প্রথম আলোর সাবেক প্রতিনিধি কামাল মাছুদুর রহমানকে ব্যুরো চিফ করার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে কামাল মাছুদ ভাইকে বরিশাল ব্যুরো চিফ, আমি স্টাফ রিপোর্টার এবং খালিদ সাইফুল্লাহ ফটো সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পান।
২০০৪ সাল থেকে চলতে থাকে নয়া দিগন্ত বরিশাল ব্যুরোর কার্যক্রম। আমি এখানকার সেকেন্ডম্যান হিসেবে যোগদান করলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমার সাথেও পরামর্শ করতেন ঢাকা হেড অফিসের কর্মকর্তারা। আমি সবসময় নিউজের সন্ধানে ব্যস্ত সময় কাটাতাম। একারনে আমার নিউজ ছাপা হতো সবচেয়ে বেশি।
২০০৭ সালে দৈনিক নয়া দিগন্তের সহযোগী প্রকাশনা হিসেবে মাসিক ‘অন্য দিগন্ত’ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্বাহী সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর ভাই তখন শুধুমাত্র আমাকেই নয়া দিগন্তের পাশাপাশি এই গবেষণা ম্যাগাজিনের বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার অফার করেন। আমি সানন্দে গুরুর দেয়া দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং লেখা ও বিজ্ঞাপন দেয়া অব্যাহত রাখি।
২০১০ সালের পর থেকে দৈনিক নয়া দিগন্তের অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান জনাব মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতারের পর এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারন করে। নিয়মিত বেতন দিতে না পারায় অনেক সংবাদকর্মী নয়া দিগন্ত ছেড়ে অন্যান্য মিডিয়ায় চলে যান। নিয়মিত বেতন না পেয়ে বরিশাল ব্যুরো চিফ কামাল মাছুদ ও খালিদ সাইফুল্লাহ অব্যাহতি নেন। কিন্তু আমি বেতন না পেলেও নয়া দিগন্ত ছেড়ে যাইনি। হালাল উপায়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য কয়েকজনে মিলে বরিশালে ‘সাতরং সিস্টেমস’ নামে আইটি এবং ডিজাইন হাউজ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করি। সেই ব্যবসার অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও নয়া দিগন্তে নিয়মিত নিউজ প্রেরণ অব্যাহত রাখি।
২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশ লাইভ সম্প্রচার করায় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বামপন্থী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নির্দেশে দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। বেকার হয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির শত শত সাংবাদিক এবং কলাকুশলী। আমি এবং আমার ক্যামেরাম্যান আবুল বাশার তাদের মধ্যে অন্যতম ভুক্তভোগী।
করোনার পর থেকে দৈনিক নয়া দিগন্তের ঢাকার বাইরের প্রতিনিধিদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকলেও বিজ্ঞাপন কমিশনের টাকা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে হাতে পাওয়া যেত। অনেক পত্রিকা যেখানে প্রতিনিধিদের প্রেরিত বিজ্ঞাপনের কমিশন নিয়ে সময়ক্ষেপণ করে, নয়া দিগন্ত এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এজন্য সবসময় সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ভূমিকায় থাকেন আমাদের গুরু সালাহউদ্দিন বাবর।
২০২৪ এ ছাত্র জনতার আন্দোলন ও গণঅভ্যূত্থানের পর আবার ঘুরে দাড়াচ্ছে দৈনিক নয়া দিগন্ত। ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের রোষানলে থাকা দৈনিক নয়া দিগন্তের কর্মীরাও যেন স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে সক্ষম হন।
এবছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শবেবরাতের ছুটির দিনে দৈনিক নয়া দিগন্ত হেড অফিসের কর্মীদের পরিবারসহ আয়োজন করা হয় নৌ ভ্রমণের। ‘ফ্যামিলি ডে’ অনুষ্ঠানের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান অনলাইন ইনচার্জ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি অ্যাডভেঞ্চার-০৯ লঞ্চ ভাড়া করার জন্য আমার কাছ থেকে নিজাম শিপিং লাইন্সের ম্যানেজার হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। আমিও হুমায়ুন ভাইকে লঞ্চভাড়া কিছুটা কমিয়ে রাখার অনুরোধ করি। লঞ্চভাড়া চুড়ান্ত হওয়ার পর মোস্তাফিজ ভাই আমাকে এই ভ্রমণে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। আমি মোস্তাফিজ ভাইকে জানাই- আমার গুরু সালাহউদ্দিন বাবর ভাই এই ভ্রমণে থাকছেন তো? তিনি বললেন হ্যাঁ। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এই ভ্রমণে অংশগ্রহণের জন্য সম্মত হই। কারণ এই দিনটি আমি গুরুর সাথে কাটাতে পারবো। বাবর ভাইয়ের সাথে ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের পেশাগত যোগাযোগ। অথচ কখনো ফ্রিভাবে তাঁর সাথে পুরো একটি দিন কাটানোর সময় হয়নি। যখন অফিসে দেখা করতে যাই, তিনি ব্যস্ততার মাঝেই সময় দেন, কথা বলেন। কিন্তু খোশ গল্প কিংবা পারিবারিক খোঁজ-খবর নেয়ার সময় হয়না। এবার আমি সেই ইচ্ছে পূরণের সুযোগ পেয়ে গেলাম।
১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বরিশাল থেকে লঞ্চে উঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সদরঘাটে পৌছলাম। আগের রাত থেকে সেখানে অপেক্ষমান অ্যাডভেঞ্চার-০৯ লঞ্চে একে একে স্বপরিবারে আসছেন নয়া দিগন্ত পরিবারের সদস্যরা। আমি মোস্তাফিজ ভাইয়ের সাথে দেখা করে সোজা চলে গেলাম ভিআইপি কেবিনে বাবর ভাইয়ের রুমে। তিনি তো আমাকে দেখে অবাক! কারণ আমি যে, এই ভ্রমণে অংশ নিচ্ছি এটা তাকে আগে জানাইনি। তিনি আমাকে দেখে খুশি হলেন। আমি বললাম- আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্যই বরিশাল থেকে এসেছি।
তিনি বললেন, এতো বড় লঞ্চে ওঠার অভিজ্ঞতা তার এই প্রথম। লঞ্চের পরিকল্পিত ডেকোরেশন, লাইটিং এবং সুবিধাসমূহ তাকে অবাক করেছে। আমি জানালাম- পারাবাত ১২ এবং সুন্দরবন ১৭ লঞ্চ দুটি আরো বড় এবং অত্যাধুনিক। আপনি বরিশাল আসার সিডিউল দিলে আমি সেইসব লঞ্চের ভিআইপি কেবিন বুকিং করবো। তিনি হাসলেন এবং বললেন সময় সুযোগ হলো যাবো- ইনশাআল্লাহ।
দুজনে চা-কপিতে চুমুক দেয়ার পাশাপাশি জমে উঠলো আমাদের গল্প আর আড্ডা। গল্পেরছলে তাকে বললাম, শুনেছি- আপনি একসময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, বাম থেকে ডানে এলেন কিভাবে? তিনি বললেন- সত্তর এবং আশির দশকে পাক্ষিক পালাবদল পত্রিকাটি বেশ জনপ্রিয় ছিলো। আমি এই পত্রিকাটিতে লিখতাম। তখন পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন আবদুস সালাম। তিনি আমাকে বেশ কিছু ইসলামিক ধারার বইপত্র দিলেন, সেগুলো পড়েই মূলত আমার বাঁক পরিবর্তন হয়। দৈনিক সংগ্রামের তৎকালীন সম্পাদক আকরাম ফারুকের সময় আমি দৈনিক সংগ্রামের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেই। পরবর্তীতে সিনিয়র রিপোর্টার ও চিফ রিপোর্টার হিসেবে পদোন্নতি পাই। সেখানকার কলিগদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। যাদের অনেকেই এখন দৈনিক নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক।
নয়া দিগন্তে এলেন কিভাবে? উত্তরে সালাহউদ্দিন বাবর বলেন, ‘২০০৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব মীর কাসেম আলী আমাকে বললেন, বাবর- আমরা ভালোমানের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আপনি পুরো প্রক্রিয়া এবং জনবল কাঠামো ঠিক করে আমাকে জানান। আমি তখন তার কথাকে তেমন গুরুত্ব সহকারে নেইনি, ভেবেছিলাম তিনি হয়তো এমনিতেই বলার জন্য বলেছেন। আরেকদিন আমাকে দেখে তিনি (মীর কাসেম আলী) বললেন, আমি যে কাজ দিয়েছিলাম তার খবর কি? আমি বললাম- আর ইউ সিরিয়াস? তিনি বললেন- ইয়েস!
এরপর আমি একটি মানসম্মত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠার যাবতীয় অবকাঠামো, জনবল কাঠামো এবং বাজেট তাঁর কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করি। সম্পাদক হিসেবে কয়েকজনের নাম আলোচনা-পর্যালোচনাভ করে অবশেষে প্রবীণ সাংবাদিক ও নিউনেশনের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনকে চুড়ান্ত করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে টানা একবছরের প্রচেষ্টায় ২০০৪ সালের অক্টৈাবর মাসে দৈনিক নয়া দিগন্ত মাত্র ৫ টাকায় বাজারে এসে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিগত ২১ বছরে নানা সংকটের মাঝেও আমরা সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি বা কারো সাথে আপোষ করিনি। এটাই আমাদের সবেচেয়ে বড় অর্জন।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যখন পত্রিকা থেকে ঠিকমতো বেতন পেতেন না, তখন কিভাবে চলতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অল্পে তুষ্ট থাকলে মানুষ কখনো লোভী হয় না, আমাদের জাগতিক ‘বিলাসী জীবন’ নিয়ে কোন ভাবনা নেই, আমরা সবসময় সাদামাটা জীবন যাপন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করতে অভ্যস্ত। তাছাড়া আমার নিজের কষ্টের চেয়েও সহকর্মীদের যাপিত জীবনের কষ্টগুলো দেখে ভীষণ খারাপ লাগতো। বিগত বছরগুলোতে দেখেছি আমার সহকর্মীরা শত অর্থনৈতিক দৈন্যতা এবং সংকটের মাঝেও তারা তাদের সততা এবং আদর্শ বিসর্জন দেননি। আমি তাদের কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ।
বিশেষ করে আমার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত সহকর্মী নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, চিফ রিপোর্টার আবু সালেহ আকনসহ অন্যসবাই যেভাবে নয়া দিগন্তের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন তা আমার জন্য পরম সৌভাগ্য।
আলাপচারিতা এবং খোশগল্পে নদীতে ভাসতে ভাসতে আমাদের বহনকারী অ্যাডভেঞ্চার-০৯ লঞ্চ যখন চাদপুরের মোহনপুর ঘাটে পৌঁছলো। তখন সবাই জুমআর নামাজের জন্য জল থেকে স্থলে নামলেন। অনেকেই স্বপরিবারে মোহনপুরের পার্ক ভিজিট এবং পার্কের বিভিন্ন রাইডে উঠিয়ে সন্তানদের সাথে আনন্দ বিনোদনের মাধ্যমে সময় কাটান। লঞ্চ থেকে মোহনপুর ঘাটে নামার সময় বাবর ভাইকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান চাদপুর জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতারা।
বিকেলে আবার ফিরতে ফিরতে নানা বিষয়ে আমাদের আলোচনা খোশ গল্প অব্যাহত থাকে। এরই মাঝে র‌্যাফেল ড্র এবং খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর। সন্ধ্যার পরে নৌ-ভ্রমণ শেষে সদরঘাটে নামার আগে সবার মাঝে ফল বিতরণ করা হয়। অফিসের কয়েকজন সহকারী কিছু ফল নিয়ে বাবর ভাইয়ের ভিআইপি কেবিনে আসেন। আমি তখনও তার সাথে কথা বলছিলাম। বাবর ভাই তাদেরকে বললেন, আমার ব্যাগে দুটি ফল রেখে বাকি সব ফল আযাদের ব্যাগে দিয়ে দাও। বললাম- আমিও ফল পেয়েছি, আমার আর প্রয়োজন নেই। তিনি বললেন, আমার পক্ষ থেকে আপনার ছেলেমেয়েদের জন্য উপহার। আমি তাঁর দেয়া সেই উপহার আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছি।
যতক্ষণ তাঁর সাথে ছিলাম, শুধু ভেবেছি- এতো বড় মাপের একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক এবং সম্পাদক হয়েও তিনি কতো সাধারণ জীবন যাপন করেন! শত সংকটের মাঝেও দুনিয়াবী প্রলোভন যাদেরকে সততা কিংবা আদর্শের জায়গা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনা।
২৪ এর গণ-অভ্যূত্থানের পর একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক হিসেবে বাবর ভাইকে নয়া দিগন্তের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেতন ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দেয়ার অফার করা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি তাঁর নিজ হাতে সাজানো দৈনিক নয়া দিগন্ত ও সহকর্মীদের ভালোবাসা ছেড়ে সেই লোভনীয় অফার সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
দৈনিক নয়া দিগন্তের বটবৃক্ষ হিসেবে সালাহউদ্দিন বাবর তার অধীনস্থ প্রত্যেক সহকর্মীকে যেভাবে ছাঁয়ার মতো প্রতিনিয়ত আগলে রাখেন- তা সত্যিই বিস্ময়কর। এমন একজন অভিভাবক পেয়ে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। গুরু তোমায় সালাম।

আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো চিফ, দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং সম্পাদক, দৈনিক বাংলাদেশ বাণী

২০০৮ সালে দৈনিক নয়া দিগন্তের হেড অফিসে ‘নির্বাচন ও রাজনীতি’ বিষয়ে ইনহাউজ ট্রেনিংয়ের আয়োজন করে আইআরআই এবং এমআরডিআই। সেই ট্রেনিং শেষে আমার হাতে সনদ তুলে দেন দৈনিক নয়া দিগন্তের তৎকালীন নির্বাহী সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর, চিফ রিপোর্টার মাসুমুর রহমান খলিলী এবং মফস্বল বার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন এমআরডিআই’র নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রহমান মুকুল।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *