বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
mosjid

ভালো নেই গ্রামাঞ্চলের ইমাম-মুয়াজ্জিনেরা

আহমেদ বায়েজীদ॥
বাকেরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে চাকরি করেন মো: হাসান। পাঁচ ওয়াক্ত ইমামতির পাশাপাশি মুয়াজ্জিন ও খাদেমের কাজও করতে হয় তাকে। মাস শেষে যা বেতন পান তা দিয়ে ৫ জনের সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই পাশাপাশি মক্তবে পড়ানো ও আরবি টিউশনি করতে হয়। তারপরও সংসারের চাকা ঠিকমতো ঘোরাতে পারেন না। বাধ্য হয়ে অবসর সময়টুকু স্থানীয় বাজারে একটি বইয়ের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।

গ্রামাঞ্চলের মসজিদগুলোতে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের কাজ করা ব্যক্তিদের বেশির ভাগের গল্পটা মোটামুটি হাসানের মতোই। অনেকে শিক্ষকতা বা অন্য চাকরির পাশাপাশি ইমামতি করেন, তাদের সংসার চালাতে বেগ পেতে হয় না; কিন্তু শুধুমাত্র ইমাম বা মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করে যাদের সংসার চালাতে হয় তাদের অবস্থা করুন। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সংসার নিয়ে তাদের টিকে থাকা কঠিন।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ, বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ ও চরফ্যাশন (ভোলা) উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় ১০ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সর্বত্র মোটামুটিই একই চিত্র। বেতন ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। অনেকে বাড়তি হিসেবে মক্তব পড়িয়ে কিছু টাকা পান। কোথাওবা মুসল্লিদের পক্ষ থেকে ইমামকে তিন বেলা খাবার দেয়া হয়। দোয়া বা কোরআনখানির মতো অনুষ্ঠানগুলোর দাওয়াতে কিছু সম্মানী পাওয়া যায়; কিন্তু সব মিলে যা আসে তাতে সংসার চালানো কঠিন।

মেহেন্দিগঞ্জ ও সদর উপজলোর কয়েকটি মসজিদে ৮ বছরের বেশি সময় ধরে ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করছেন আবু জাফর শাহিন। ইমামদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেকেই হয়ে পড়েছেন ঋণগ্রস্ত। অনেকে অসুস্থ হলেও চিকিৎসা করাতে পারেন না। বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের একটি মসজিদের ইমাম মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, বর্তমান বাজারে শুধু ইমামতি করে সংসার চালানো সম্ভব নয়। আবার পাঁচ বেলা দায়িত্ব পালনের কারণে অন্য চাকরি করাও কঠিন।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়ন ইমাম কল্যাণ ট্রাম্পের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলামের ইসলামের সাথে কথা হয় এ ব্যাপারে, যিনি নিজেও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। মাওলানা রফিক বলেন, গ্রামের ইমামেরা বড় ধরণের বৈষম্যের শিকার। তারা ন্যায্য পারিশ্রমিক পান না। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সংসার চালানো খুবই কঠিন।
একই উপজেলার কামারখালী বাজার কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের ইমাম ও দাড়িয়াল ইমাম কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি মাওলানা নুরুল হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রামের ইমামেরা যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ইমামদের প্রতি এই অবিচার কাম্য নয়।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আয় কম হওয়ার কারণ মসজিদ পরিচালনার যাবতীয় খরচ জোগান দিতে হয় মুসল্লিদের চাঁদার টাকায়। শহরে তুলনামূলক ধনী ও বেশি মুসল্লি থাকায় মসজিদের আয় বেশি হয়; কিন্তু গ্রামের মসজিদগুলোর বেশিরভাগেরই দৈন্যদশা। মসজিদ কমিটির পক্ষে তাই বেশি ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এই বাস্তবতাটাও বুঝতে পারেন ইমামেরা। যে কারণে পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করে যান।

এই পরিস্থিতিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাগ্যোন্নয়নে করণীয় কী- এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা নুরুল হক বলেন, তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয়ার বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের সংসার আছে সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। তবে জাতীয়করণই মূল্যায়নের সঠিক পন্থা বলে মনে করেন এই ইমাম। তিনি বলেন, এক সাথে সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জাতীয়করণে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সেটি যতদিন না হয় ততদিন সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা বা এককালীন প্রণোদনা থাকা উচিত। অন্তত বছরে দুটো ঈদ বোনাসও যদি সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় তাহলে কিছুটা স্বস্তি পাবেন তারা।

মাওলানা আবু জাফর শাহিন বলেন, ইমামদের বেতন নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগী হওয়া উচিত। অন্যান্য সেক্টরের মতো ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্যও নূন্যতম বেতন ঠিক করে দেয়া উচিত সরকারি কর্তৃপক্ষের।

বিষয়টিতে বর্তমান ধর্ম উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একাধিক ইমাম। একজন ইসলামিক ব্যক্তিত্ব অন্তবর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টার পদে থাকায় ভালো কোন সিদ্ধান্ত আসা উচিত বলে আশা করেন তারা।

এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন- বরিশালের পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, গতকালই (শনিবার) ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য বেতন কাঠামো প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি হয়ে গেলে আশা করি তাদের সমস্যার সমাধান হবে। তখন আর মসজিদ কমিটি ইচ্ছেমতো বেতন নির্ধারণ করতে পারবে না।

আরো পড়ুন

dr younus

আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না : প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥ বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *