আযাদ আলাউদ্দীন ।।
ঘটনার ০৯ মাস পর বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার দায়ের করা একটি মামলা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে, সবমহলে চলছে দোলপাড়। ২৪৭ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামলা করে আবার সেই মামলা থেে আসামীদের কারো কারো নাম বাদ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই নেতার বিরুদ্ধে। তবে মামলার বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মারজুক আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার প্রতিটি অভিযোগের জবাব আমার কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে আমি ডকুমেন্টস সহ সবকিছু জনসম্মুখে তুলে ধরবো।
এদিকে এই মামলা ও চাঁদা দাবির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির অন্য নেতারা কোনোভাবে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ। তিনি বলেন, যিনি এই মামলা দায়ের করেছেন তাকে ইতিমধ্যে শোকজ করা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে, তারা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সোমবার (১৯ মে) বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয় ।
শোকজের সত্যতা নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল জেলা মুখপাত্র সুমি হক বলেন, তাঁরা এই মামলার বিষয়ে গতকাল বিকেলে বৈঠক করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, মামলার আসামি যেমন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আছেন, তেমনি সাধারণ গণমাধ্যমকর্মী, কৃষক, জেলেও রয়েছেন। তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলেও তাঁদের হাতে এখনও কোন প্রমাণ আসেনি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গত ১৪ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব মারজুক আব্দুল্লাহ বরিশাল কোতোয়ালি থানায় বিভিন্ন উপজেলার ২৪৭ ব্যক্তির নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার সঙ্গে জেলা কমিটির আহ্বায়কসহ অনান্যরা কোনোভাবেই জড়িত নয় এবং জেলা কমিটির সদস্যরাও জড়িত নয়। কিছু কুচক্রীমহল কমিটির আহ্বায়কসহ কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই মামলাকে কেন্দ্র করে বিএম কলেজে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তারা মনে করছেন এটি পরিকল্পিত। বিএম কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতেই কিছু মহল এমনটা করছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যদি এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, প্রথমে যখন মামলাটির ড্রাফট করা হয় তখন আসামী ছিলো তিন শতাধিক ব্যক্তি। বাদী মারজুক আবদুল্লাহর স্বাক্ষরিত সেই ড্রাফটের কপিও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ওই ড্রাফটে যাদের আসামী হিসেবে নাম লেখা হয়েছিলো তাদের অনেকের নাম মামলার চুড়ান্ত এজহারে আসেনি। ড্রাফটের পর একমাস যাবত আসামীদের অনেকের সাথে অর্থবাণিজ্য কিংবা রফাদফা অনুযায়ী অনেকের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। ড্রাফটের কপি ও চুড়ান্ত কপি পর্যালোচনা করে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এবিষয়ে মামলার বাদী মারজুক আবদুল্লাহ বলেন, কোন মামলায় গণহারে আসামি না দিয়ে অনধিক আড়াইশ আসামী দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী ড্রাফট থেকে আসামী সংখ্যা কমিয়ে চুড়ান্ত মামলায় ২৪৭ জনকে আসামী রাখা হয়েছে। অর্থ বাণিজ্য বা রফাদফার মাধ্যমে কারো নাম বাদ দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ২৪৭ জনের মধ্যে নিরপরাধ কেউ থাকলে সেটি আদালত দেখবেন, আমার দ্বারা কেউ অহেতুক হয়রানির স্বীকার হবেন না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির অন্য নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে আপনাকে শোকজ করার কথা বলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী মারজুক আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের কমিটির কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে আসামী তালিকা থেকে বাদ দিতে বলেছিলেন, তাদের কথা আমি রাখিনি- এজন্য ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সার্বিক বিষয় আমি কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করেছি।
গণমাধ্যম কর্মীদের এই মামলায় আসামী করার বিষয়ে বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান হীরা বলেন, এই মামলাটির ড্রাফট তৈরি থেকেই বিতর্কিত নানা বিতর্কিত কথা শোনা যাচ্ছিলো। চুড়ান্ত এজহারে সাংবাদিকসহ কিছু নিরীহ মানুষকেও আসামী করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।