মোশাররফ মুন্না ॥
বরিশাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে তিনদিনব্যাপী বুদ্ধিজীবী হত্যা ও বিজয় দিবসের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে গতকালের পরিবেশনা ছিলো বরিশাল সংস্কৃতিকেন্দ্র ও এর সহযোগী সংগঠনের।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বরিশাল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং সংস্কৃতিকেন্দ্র ও এর সহযোগী সংগঠনের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দর্শকদের মধ্যে মুগ্ধতা ছড়ায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল সংস্কৃতিকেন্দ্রের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল হাই।
আলোচক ছিলেন প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু, কবি মুস্তফা হাবীব, ডা. কে এম জাহিদুল ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরিশালের অন্যতম সংগঠক সাব্বির হোসেন সোহাগ।
আলোচনা সভায় অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু বলেন, জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অর্জনকে কোনো ক্রমেই ব্যার্থ হতে দেয়া যাবে না যারা এখনও ভিন্ন চিন্তা করেন তারা ভুলের মধ্যে বাস করছেন। শহীদের রক্ত আবু সাঈদ মুগ্ধের রক্ত বৃথা যাবে না। সন্ত্রাস নৈরাজ্যবাদীদের দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
কবি মুস্তফা হাবিব বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র জনতা শিক্ষক কবি সাংবাদিক সর্বমহলে বৈষম্যতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিল পতিত স্বৈরাচার। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশেষ করে কবি লেখকদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
আয়োজনের সভাপতি মো. আব্দুল হাই কবি ফররুখ আহমদ এর পাঞ্জেরী কবিতার উদ্ধৃতি টেনে বলেন, স্বৈরাচার পাশ্ববর্তী দেশে বসে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। সেই ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়ে, অন্ধকার ভেদ করে আলোর পতাকা আমরা উড়াবোই। একই সাথে তিনি শেখ হাসিনার উস্কানীমূলক বক্তব্যের প্রতি ভারতের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বন্ধের আহ্বান জানান।
সমন্বয়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কী আর জীবন দিতে চাই? আমরা মুক্তি স্বাধীনতার জন্য আর জীবন দিতে চাই না। বাংলাদেশে শহীদদের রক্তের সাথে আবার কেউ যদি বেইমানী করে। তাহলে ছাত্র-জনতা তাদেরকে রুখে দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিলেন বরিশাল সংস্কৃতিকেন্দ্র, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংসদ, হেরাররশ্মি শিল্পীগোষ্ঠী, বাকলা নাট্যমঞ্চ, কণ্ঠশীলন একাডেমি, মুক্তবুলি পাঠক ফোরাম, স্রোত আবৃত্তি সংসদ, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি। বিশেষ করে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী হেরাররশ্মি শিল্পীগোষ্ঠীর শিশু-কিশোর শিল্পীদের লাল সবুজের সাজে নানানরকম দেশাত্মবোধক গানে গানে শহিদমিনার প্রাঙ্গণ যেন বিজয়ের প্রকৃত স্বাদে উল্লসিত হয়ে পড়ে। গানে গানে দেশ মাটি ও শহিদদের বীরগাঁথা দর্শকদের হৃদয়ে জাগায় মুক্তির নব চেতনা। স্রোত আবৃত্তি সংসদের শিল্পী মঞ্জুরুল ইসলাম শোয়াইবের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি ও বাকলা নাট্যমঞ্চের নাটক ‘আগেই তো ভালো ছিলাম’, ‘আবু সাঈদ’ প্রভৃতি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শেকড় সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি নয়ন আহমেদ, বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক জোটের সমন্বয়ক এসএম সাব্বির নেওয়াজ সাগর, বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম সংগঠক কবি পথিক মোস্তফা, জাসাস মহানগর আহ্বায়ক মীর আদনান তুহিনপ্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, বাংলাদেশী সাংস্কৃতি জোটের অন্যতম সংগঠক ও বরিশাল সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালক আযাদ আলাউদ্দীন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী বুদ্ধিজীবী হত্যা ও মহান বিজয় দিবসের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক জোট, বরিশাল। আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বরিশাল। ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের মুখ্য আয়োজক ছিলো শেকড় সাহিত্য সাহিত্য সংসদ, বরিশাল, কবিতা পরিষদ, বরিশাল শাখা ও বর্ণ অ্যাকাডেমি, বরিশাল। আজ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় রয়েছে জাসাস, বরিশাল জেলা ও মহানগর এবং তার সহযোগী সংগঠনসমূহ।