বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
Muladi
Muladi

মুলাদী আল-রাজী স্কুলে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী॥

বরিশালের মুলাদী উপজেলায় আল-রাজি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় স্কুল মাঠে দিন ব্যাপি পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালি ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের পিঠার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন। উৎসবে অংশগ্রহণকারি ২০টি স্টল চিতই পিঠা, দুধচিতই, ছিট পিঠা, পাক্কান পিঠা, দুধকুলি, ক্ষীরকুলি, তিলকুলি, পাটিসাপটা, ফুলঝুড়ি, ধুপি পিঠা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, পাকন পিঠা, গরু ও হাঁসের ঝাল মাংসসহ ৯০ প্রকারের বাহারী রকমের পিঠা। সুন্দর পরিবেশে এ উৎসব হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের পদ চারণায় স্কুলের ক্যাম্পাসটি ছিল আনন্দ মুখরিত।

পিঠা উৎসবে আশা দর্শনার্থী আয়শা সিদ্দিকা মনি, নুসরাত জাহান, মোঃ মাশরাত ভূঁইয়া, তাহিরা, মার্জিয়া, কুলসুম, বিথী, চাঁদনী, অনামিকা, সুখি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য স্কুলের অধ্যক্ষ মু. আব্দুল আহাদসহ কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে।

আল-রাজি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ মু. আব্দুল আহাদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.
নিজাম উদ্দিন। বিদ্যালয়ের ভাইস প্রিন্সিপাল মোঃ সোলাইমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার এইচ এম সুমন, আল-রাজী স্কুলের উপদেষ্টা মোঃ নজিবুর রহমান ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী সরকারী কলেজের প্রভাষক মোঃ ইকবাল হোসেন, মুলাদী সরকারী কলেজের প্রভাষক মোঃ হোসেন দুলাল ও স্কুলের পরিচালক আঃ মোতালেব। গ্রামবাংলা থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠা হারিয়ে যাওয়ায় আল-রাজি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতি বছর পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে গ্রাম বাংলার হাজার হাজার জনগণের মাঝে পুরানো ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বক্তারা। আল-রাজি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের লেখা-পড়া, খেলা-ধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে উপজেলায় বেশ সুনাম রয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই হাঁটিহাঁটি পা পা করতে করতে ও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। শিক্ষার মানবৃদ্ধির জন্য স্কুলে ইংলিশ ভার্সনও চালু রয়েছে।

গ্রামবাংলায় নতুন ধান ওঠার পর সেগুলো গোলাবন্দি করতে বেশকিছুটা সময় লেগে যায়। এই কর্মব্যস্ত সময়ে গ্রামীণ মানুষের ‘শখ’ করার সময়টুকু থাকে না। নবান্নের পর জাঁকিয়ে শীত পড়লে পৌষসংক্রান্তিতে পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। তারপর বসন্তের আগমন পর্যন্ত চলে হরেকরকম পিঠা খাওয়ার ধুম। মূলত মাঘ-ফালগুন এ দুমাসই জমিয়ে পিঠা খাওয়া হয়। এরপর আর পিঠার স্বাদ ঠিকমতো পাওয়া যায় না বাংলা ভাষায় লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত ইত্যাদি কাব্য এবং মৈমনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখা গল্পকথনের সূত্র ধরে আনুমানিক ৫০০ বছর আগেও বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠার জনপ্রিয়তার উল্লেখ পাওয়া যায়।

যেহেতু প্রাচীন বইপুস্তকে পিঠার উল্লেখ আছে, কাজেই ধরে নেওয়া যায় পিঠা খাওয়ার প্রচলন বাঙালি সমাজে অনেক প্রাচীন। বসবাস করা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পিঠা যে জনপ্রিয় খাবার, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রাচীন বাংলায় মিষ্টান্ন হিসাবে পিঠার জনপ্রিয়তাই সম্ভবত বেশি ছিল। বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর বা সন্ধ্যায় গাঁয়ের বধূরা চুলার পাশে বসে ব্যস্ত সময় কাটায় পিঠা তৈরিতে। অতিথি বিশেষ করে জামাইদের এ সময় দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হয়। এ সময় খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়। খেজুরের রসের মোহনীয় গন্ধে তৈরি পিঠা-পায়েস আরও বেশি মধুময় হয়ে ওঠে। সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়াও আছে চিতই পিঠা, দুধচিতই, ছিট পিঠা, দুধকুলি, ক্ষীরকুলি, তিলকুলি, পাটিসাপটা, ফুলঝুড়ি, ধুপি পিঠা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, মালপোয়া, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা ইত্যাদি।

কালের গর্ভে কিছু হারিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা নখাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ইদানীং শহরেও পাওয়া যায় শীতের পিঠার স্বাদ। একসময় এ দেশে যেমন শত শত নামের ধান ছিল, তেমনি সেসব ধানের পিঠারও অন্ত ছিল না। কত কী বিচিত্র নামের পিঠা! পিঠা তৈরি ছিল আবহমান বাংলার মেয়েদের ঐতিহ্য। পিঠা-পায়েসকে নিয়ে

গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এখনো অসংখ্য গান, কবিতা ও ছড়া  প্রচলিত আছে। পিঠাকে ঘিরে ‘পল্লী মায়ের কোল’ কবিতায় বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন, ‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।’ আমাদের হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও গ্রামবাংলায় এসব পিঠা- পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি। পিঠা-পার্বণের এ আনন্দ ও ঐতিহ্য যুগ যুগ টিকে থাকুক বাংলার ঘরে ঘরে।

আরো পড়ুন

excident

বিএম কলেজ সংলগ্ন সড়কে শিশু নিহত, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরীর ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ বছরের শিশু জান্নাত নিহত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *