বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে প্রতারণা করায় তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বরিশালের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সোহেল আহমেদ এ রায় দেন।
দণ্ডিতরা হলেন—বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদের ছেলে কাতার প্রবাসী জসিম উদ্দীন হাওলাদার, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান যুথি ও জসীমের ছোট ভাই ভানুয়াতু প্রবাসী পলাশ হাওলাদার
তাদের মধ্যে জসিম উদ্দীন ও পলাশকে দুই ধারায় যাবজ্জীবন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যুথীকে দুই ধারায় ১৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত আলী খান ও এসএম সরোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
রায় ঘোষণার সময় শুধু যুথী এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা পলাতক বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা।
মামলার বাদী বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন।
মামলার বরাতে বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা বলেন, মামলার প্রধান সাক্ষী সজল জমদ্দার ও বাদী মোফাজ্জেল একই এলাকায় ব্যবসা করতো। ব্যবসার সুবাদে তাদের মধ্যে সু সম্পর্ক তৈরি হয়। এর জেরে সজল জানায় তার খালাতো ভাই পলাশ হাওলাদার কিউবা থাকে। তাকে কিউবা নিয়ে যাবে। সজলের প্রস্তাবে পলাশের সঙ্গে কথা বলে মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতনে মোফাজ্জেলও কিউবা যেতে রাজি হয়। শর্ত অনুযায়ী সজল ও মোফাজ্জেল কথিত কিউবা প্রবাসী পলাশের ভাই জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রীকে মোট ২১ লাখ টাকা দেয়।
এরপর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর কলকাতা, দিল্লি, সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে ভানুয়াতু পৌঁছে তারা। সেখানে পলাশ তাদেরসহ মোট ১০ জনকে নিয়ে একটি নির্জন বাসায় আটকে রাখে। পরে সেখান থেকে অষ্ট্রেলিয়া নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পলাশের ভাইসহ স্বজনদের আরও ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের অষ্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়নি। ভানুয়াতুতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার পর কয়েকজন পুলিশের কাছে ধরা দেয়। পরে পুলিশ পলাশকে গ্রেপ্তার করে।
এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেওয়া ১০৩ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তিতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন এন্ড মাইগ্রেশনের তত্ত্বাবধানে দেশে ফিরে আসে তারা। দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে আসামিরা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে। এ ছাড়াও তাদের খুন-জখমের হুমকি দেয়। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মানব পাচার আইনে বরিশাল মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন মোফাজ্জেল হোসেন। মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়।
বেঞ্চ সহকারী বলেন, এর মধ্যে দুইজনকে বাদ দিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিচারক ২৩ জনের মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় দিয়েছেন।