শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

বিচিত্র প্রতিভার কবি গোলাম মোস্তফাকে স্মরণের আয়োজন করলো ‘শেকড়’

পথিক মোস্তফা॥

কবি গোলাম মোস্তফা। ‘বিশ্বনবী’ গ্রন্থের অমর রচয়িতা, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক শিশুসাহিত্যিকসহ বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী। তিনি লিখেছেন, কোরানিক ঘটনার মহাকাব্য ‘বনি আদম’; যা অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। অনুবাদ সাহিত্যেও তার রয়েছে বিস্তীর্ণ সৃজনভূমি। অনুবাদকেও তিনি একান্ত আপনার করে ব্যক্ত করেছেন, মূল কবির লেখার বিষয়কে না পাল্টিয়ে। এই বিচিত্রমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিলেন, আমাদের প্রজন্মের মেধা আর মননের যায়গা থেকে। কী কারণ হতে পারে এই হারিয়ে যাওয়ার? আপনি যদি ভুলেও ভেবে থাকেন, তার সাহিত্য প্রতিভার ঘাটতির কারণেই তিনি মানুষের মাঝে চর্চিত হচ্ছেন না; তা হলে আপনি বোকাবনে যাবেন।

সাহিত্যের সামান্য অধ্যায়নও যার আছে কবি গোলাম মোস্তফাকে পাঠ করলেই তিনি বুঝতে পারবেন, অযতনের গ্লানিটা আমাদেরই, কবির নয়।
‘হে খোদা দয়াময় রহমানু রাহিম/হে বিরাট, হে মহান, অনন্ত অসীম’ হামদ শুনতে গেলেই পছন্দের তালিকায় চলে আসে এই গান। শুনেছেন হয়তো অনেক, কিন্তু আমার এক সময়ের ভাবনার মতো আপনিও হয়তো ভেবেছেন, এই হামদ কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন। আবার বাংলাদেশে রোভার স্কাউটের প্রার্থনা সংগীত ‘বাদশা তুমি দীন ও দুনিয়ার হে পরোয়ার দিগার’ শুনেছেন তো নিশ্চয়ই কিন্তু হয়তো ভেবেছেন, এতো সুন্দর হামদ কার লেখা? আর সেই বিখ্যাত না’তে রাসুল সা. ‘নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি আমার মুহম্মদ রাসুল’ সবই কিন্তু প্রিয় কবি গোলাম মোস্তফার লেখা। তার মানে সাহিত্যের অমর স্রষ্টা ভুলে আছেন,ভুলতে পারেননি তার অমর কীর্তিকে। তাইতো কথায় আছে,
‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’।

হ্যাঁ, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যসংগঠন ‘শেকড় সাহিত্য সংসদ’ সাহিত্যের সকল কীর্তিমানকেই স্মরণ করতে চায়। যাদের নিয়ে আমরা কেবলই মেতে থাকি, কোনো গোষ্ঠীবদ্ধতার কারণে কাউকে ভুলে থাকি, এই নষ্টমতি বাদ দিয়ে ‘শেকড়’ সুস্থ ধারার সাহিত্য চর্চা করে আসছে, করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ অনুসারে ২২ ডিসেম্বর ২০২৪খ্রিস্টাব্দ কবি গোলাম মোস্তফার ১২৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবো আমরা। এই উদযাপন কেক কেটে, ফানুস উড়িয়ে আর বেলুন ফাটিয়ে নয়, হবে কবিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়েই ৩০ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখ, সকাল ১০টায় বরিশাল সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাশিপুর বরিশালের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় কবি গোলাম মোস্তফার কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। ২য় থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুই বিভাগে বিভক্ত হয়ে প্রায় অর্ধশত প্রতিযোগী এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। আয়োজনটির অংশীজন ‘শেকড় সাহিত্য সংসদ, বরিশাল’।

প্রাণবন্ত এই আয়োজনে বক্তারা কবি গোলাম মোস্তফার বিভিন্ন দিক নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেন। বিশেষ অতিথি
শেকড় সাহিত্য সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ফ্যাসিস্ট সরকার তার প্রভু রাষ্ট্রের
এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চাইছিলো। তাই কবি গোলাম মোস্তফার মতো নীতি-নৈতিকতার ধারক কবিকে তারা মুছে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতা তা রুখে দিয়েছে। এখন আমাদেরকে কবি গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদদেরও
চর্চা করতে হবে। অতিথি শেকড় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক, কবি-গবেষক ও শিক্ষক, পথিক মোস্তফা বলেন, কবি গোলাম মোস্তফার
আদর্শিক কবিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। তিনি নস্টালজিক হয়ে বলেন, ‘ছোটোবেলায় আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুরা ফাতিহা পড়ার পর কবির সুরা ফাতিহার কাব্যানুবাদ পড়তাম। ‘অনন্ত, অসীম, প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী/ যত গুণগান হে চির মহান, তোমারই অন্তরযামী’। এই কবিতাটির পাঠ আবার চালু করার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ অতিথি, সমসাময়িক কালের অন্যতম সেরা কবি, শেকড় সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি নয়ন আহমেদও কবি গোলাম মোস্তফাকে বেশি বেশি চর্চা করার তাগিদ প্রদান করেন। তিনি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের সামনে কবি গোলাম মোস্তফার সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গবেষক-কবি ও শিক্ষক বেগম ফয়জুন নাহার শেলী বলেন, ছোটোবেলায় বাবার মুখে কবি গোলাম মোস্তফার ‘শিক্ষক’ কবিতাটির আবৃত্তি শুনে এখনও মুখস্থ রয়েছে। তিনি বলেন, গোলাম মোস্তফা কোনো ছোটো কবি নন; তার সাহিত্যের গভীরতা অনেক। তাই গোলাম মোস্তফাকে বেশি বেশি পড়তে হবে। তিনি একজন সুস্থ ধারার নীতিবান কবি, তাকে সকল শিক্ষার্থীর পড়া উচিত।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক মো: তাজুল ইসলাম। আবৃত্তি প্রতিযোগীদের সকলকেই অংশগ্রহণের জন্য পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হবে আগামী ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের মূল আয়োজনে। আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক পরিচালক মো: আরিফুল ইসলাম, শিক্ষক সুধীন বৈদ্য, মো: আল আমীন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন, স্কুলটির সহকারী শিক্ষক ও বর্ণ অ্যাকাডেমির পরিচালক মৌমিতা বিনতে মিজান। এই আয়োজনে
গান পরিবেশন করেন, বর্ণ অ্যাকাডেমির শিল্পী মৌমিতা ও পার্থ রায়সহ শিক্ষার্থীগণ।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *