এরশাদ সোহেল, বিশেষ প্রতিবেদক :
সবুজ বেষ্টনীতে মাথা উঁচু করে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী বটগাছ,মাঝখানে বিশালাকার দিঘী। আর তার জলাধার ছেঁয়ে গেছে লাল শালুকে। সবুজ শ্যাওলা,জলজ লতা-গুল্ম,মাছেদের খেলার সাথে লাল শালুক ফুলের গোলাপী আভায় সৃষ্টি হয়েছে অনন্য সৌন্দর্য্যের । প্রতিদিন শত বছরের এই পুরনো দিঘীভরা শালুক ফুল দেখতে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।
দ্বীপ জেলা ভোলার তজুমদ্দিনের লামছি শম্ভুপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ির পুরনো দিঘীটি প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো বলে জানা যায়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এ বাড়ির মালিক স্বরুপ মজুমদার ১৮০০ সালের দিকে ২০০ শতক জমির উপরে দিঘীটি খনন করেন। পাশাপাশি হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজা-অর্চনার জন্য বাড়ির ভেতরে নির্মাণ করেন নিজ নামে একটি ধর্মীয় আশ্রম। আশ্রমের সভাপতি রবী প্রসাদ দে জানান,প্রয়াত স্বরুপ মজুমদার ১৯১০ সালে এই আশ্রমের জন্য জমি দান করেন। তারও বহু আগে এই দিঘীটি খনন করা হয়। সে হিসেবে এটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো বলে দাবী করেন তিনি।
এ বাড়ির বাসিন্দা সুব্রত দে জানান,তজুমদ্দিন উপজেলার পুকুর থেকে প্রায় দশ বছর আগে শালুক ফুলের মোথা এনে এই দিঘীতে লাগানো হয়,পরে ধীরে ধীরে তা দিঘীর চারপাশে ছড়িয়ে যায়। লাল শালুক ফুল দেখতে প্রতিদিনই লোকজন আসেন। তিনি আরো বলেন,স্বরুপ মজুমদারের কোনো ছেলে সন্তান ছিলোনা,তিন মেয়ের ঘরের নাতী-নাতনিরা এখন এ দিঘী এবং আশ্রম রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছেন,তার আরেক নাতী অর্থাৎ তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু অনিল সাধু ও দিঘীর পাড়ে বসতেন, সময় কাটাতেন বেশীরভাগ সময় ধ্যানমন্দিরে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
দিঘীর পাড়ে কালের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছ এবং একটি পুণাল(স্থানীয়ভাষায়)গাছ লক্ষ্য করা যায়।দিঘীর প্রতিষ্ঠাতা স্বরুপ মজুমদারের নাতনি সত্তোরোর্দ্ধ বৃদ্ধা দিপালী দে বলেন এই বট গাছের বয়সই প্রায় দেড়শো বছর এবং পুণাল গাছটি একশত পচিশ বছরের ও অধিক সময়ের,আর তখন এই দিঘীটি খনন করা হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন,আমরা মুরব্বিদের কাছ থেকে এই দিঘীর কথা অনেক শুনেছি। ধারণা করা হয় এই বাড়িটি প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। শিক্ষক ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন,দর্শনার্থীদের বিষয়টি চিন্তা করে ওখানে অনেক পুরনো স্থাপনা, যেমন- দিঘী,পুরনো গাছ,শালুক ফুলের মনোরম দৃশ্যাবলী, পুরনো স্থাপনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।
ছবির ক্যাপশন: তজুমদ্দিনের শম্ভুপুর গ্রামে শত বছরের পুরনো দিঘী ছেঁয়ে আছে লাল শালুক ফুলে।