বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
আমেনা ও মাইমুনা দুই বোন, যারা অভাব-অনটনের সংসারে শিশু বয়স থেকেই ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছিল। আট-দশ বছরের এই দুই শিশু তাদের উপার্জন দিয়ে মায়ের সঙ্গে সংসার চালাতো।
তবে জীবিকার তাগিদে ফুল বিক্রির কাজ করতে গিয়ে তাদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তবুও সংগ্রামের পথে জীবিকা ছিল তাদের জন্য প্রধান। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তারা দিনের পাশাপাশি রাতেও নগরের বেলস্ পার্কে ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করতো।
কিন্তু এক সন্ধ্যায় তাদের ভাগ্য যেন পাল্টাতে শুরু করে। বরিশালের জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বেলস্ পার্কে হাঁটার সময় শিশু দুটির শীতে কাঁপতে থাকা লক্ষ্য করেন। তার বিবেকের তাড়নায় তিনি দ্রুত তাদের কাছে গিয়ে পরিস্থিতি জানতে চান।
জানা যায়, শিশু দুটির বাড়ি বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসূলপুর কলোনিতে। তাদের বাবা তেমন কোন কাজ করেন না, আর বড় ভাইও দায়িত্বহীন। ফলে দুই বোনই সংসারের হাল ধরতে ফুল বিক্রি করছিল। তাদের পরিবারে আরও এক ছোটভাই রয়েছে, যাঁর বয়স মাত্র ৬-৭ মাস।
সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, “তাদের পরিস্থিতি জানতে পেরে, প্রথমে শীতের কাপড় হিসেবে দুটি কম্বল দিয়েছি। পরে তথ্য যাচাই করে তাদের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপর আমেনা ও মাইমুনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে, ফুল বিক্রির জন্য ব্যবস্থা করেছি।”
শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী কামরুন্নাহার ইভা জানান, সাজ্জাদ পারভেজ স্যারের সহায়তায় তারা ৮ নং চকবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেসঙ্গে স্থানীয় একটি টেইলার্সে তাদের স্কুল ড্রেস তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়। এখন তারা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফুল বিক্রি করেও সংসারে সহায়তা করতে পারবে।
এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, “আমেনা ও মাইমুনা যেন শিক্ষার আলো পায়, এটাই আমার মূল লক্ষ্য ছিল। তাদের পাশে দাঁড়াতে পারার মাধ্যমে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হয়েছে।”