শুক্রবার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫

তাজমহল আকৃতির দেড়শো বছর পুরোনা জমিদার বাড়ি মসজিদ 

মোশাররফ মুন্না :

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মোগলরীতির নিদর্শন হিসেবে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ বিবেচিত। ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি তাজমহলের মতো আকৃতিতে নির্মিত এবং চমৎকার নৈপুণ্যে ভরা। মসজিদটির তিনটি দরজা, ছয়টি লোহার খামের ওপর প্রতিষ্ঠিত জাফরির কাজ এবং গাত্রে শিলালিপি ও চিনে মাটির নকশার নিদর্শন রয়েছে। এর ভেতর ও বাহিরে জ্যামিতিক লতাপাতা এবং ফুলের নকশা শোভিত, এবং ছাদের নকশা বীমযুক্ত। যদিও মসজিদটি কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে, তবুও এর পুরোনো নকশা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মসজিদটি একসাথে শতাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

মসজিদের শৈল্পিক সৌন্দর্য যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চারপাশের সবুজ প্রকৃতির মধ্যে। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।

মেহেন্দীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী উলানিয়া বাজার সংলগ্ন এই মসজিদটির সামনে শানবাঁধানো একটি দীর্ঘ ঘাট এবং বিশাল পুকুর রয়েছে। চারপাশে সবুজ প্রকৃতি, সুপারি, নারকেল গাছসহ নানা ধরনের গাছপালা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

বাংলা সাহিত্যের শক্তিশালী লেখক, প্রাবন্ধিক, কবি আসাদ চৌধুরী এবং ঐতিহাসিক, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী শৈশব-কৈশোরে এখানে বেড়ে উঠেছেন, যা মসজিদটির আরও একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বাড়ায়।

পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে, মগ-পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ছিল মগদের প্রধান শক্তির কেন্দ্র। এসব জলদস্যুদের দমন করতে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব তার সুবেদার শায়েস্তা খানকে পাঠান। শায়েস্তা খান তার পুত্র উমেদ খান এবং বিশাল সেনাবাহিনীসহ মেহেন্দীগঞ্জের গোবিন্দপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন, যা স্থানীয়ভাবে ‘সংগ্রাম কেল্লা’ নামে পরিচিত। এই অভিযানে মো. হানিফ বীরত্বের সাথে নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং মগ-পর্তুগীজদের বিতাড়িত করেন। তবে, পারস্য বংশোদূত মো. হানিফ এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন এবং তার একটি কন্যা সন্তান ছিল।

পরে মো. হানিফের ভ্রাতৃবধূ ও জামাতা, শেখ মো. হাবিজ উলানিয়া অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। মো. হাবিজের পুত্র শেখ মো. সদরুদ্দিনের আমলে উলানিয়া জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। তার তিন পুত্র—নয়া রাজা চৌধুরী, কালা রাজা চৌধুরী এবং হাসান রাজা চৌধুরী—তাদের সময়ে জমিদার বাড়িটি একটি দুর্গের মতো উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়, এবং বাড়ির প্রধান ফটকের পাশে মসজিদ নির্মিত হয়, যা বর্তমানে ‘উলানিয়া জমিদার বাড়ি মসজিদ’ নামে পরিচিত।

বর্তমানে জমিদার বাড়িটি দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মেঘনার শান্ত সৌন্দর্য এবং নদীর পাড়ে নির্মিত পাকা বেড়ীবাঁধের দৃশ্য মনোহর।

যাতায়াত:
ঢাকা থেকে মেহেন্দীগঞ্জ-ভোলা রুটে উলানিয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত পৌঁছালে মসজিদ এবং জমিদার বাড়ি মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বরিশাল থেকে লঞ্চে পাতারহাট নেমে অটো সিএনজি বা মোটরসাইকেলে চড়ে সহজেই মসজিদে যাওয়া যায়।

আরো পড়ুন

পদ্মা মনসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত 

মো. সিরাজুল ইসলাম,কুঞ্জেরহাট: ভোলা বোরহানউদ্দিন উপজেলা পদ্মা মনসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *