রবিবার, মে ৪, ২০২৫
Muladi
Muladi

মুলাদীতে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নুতন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার তৈরী

ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী: বরিশালের মুলাদী উপজেলায় সরকারী মুলাদী কলেজ ক্যাম্পাসে ২১ ফেব্রুয়ারী শহিদদের স্মরণে ফুলেল শুভেচ্ছা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নতুন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হবে।

শহিদ মিনারটি এর আগে কলেজের পশ্চিম পার্শ্বে ছিল। শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে কলেজের নতুন পাকা রাস্তা হওয়ায় জায়গাটি সংঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং তার সমানে কলেজর নতুন ভবন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে শহীদ মিনার পিছনে পড়ে যাবে। সেজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজ ক্যাম্পেসের পূর্ব দিকে পূর্ব ও দক্ষিণ কোণে সাদা ধবধবে টাইলস্ধসঢ়; দিয়ে নুতন শহীদ মিনার করা হয়েছে। তাতে ব্যায় হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই বেশ বড় ও আধুনিক মানের শহিদ মিনার তৈরী করে শহিদদের ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে
কর্তৃপক্ষ। কাজটি যাতে সুন্দর ও দ্রুত হয় সেজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিজাম উদ্দিন তার অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে মাঝে মাঝে পরিদর্শন করেছিলেন।

৯০ দশকের দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার হিসেবে ফুলের শুভেচ্ছা দেয়া হতো মুলাদী উপজেলা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর কোণে। মাঠ ও শহিদ মিনারের পরিচর্যা না হওয়ায় আস্তে আস্তে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার হিসেবে সরকারী মুলাদী কলেজের শহীদ মিনারকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার হিসাবে ব্যাবহার করে আসছে।

১৯৫২ সালের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি নাগরিক ৫৪%ভাগ হওয়ায় তাদের দাবী মাতৃভাষা বাংলা চাই। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার ঊর্দূকে একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণার করলে বাঙালি ছাত্র সংগঠন তীব্র বিরোধিতা শুরু করলে পাকিস্তানী সরকার তাদের আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়ার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। সেই ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মুখরিত করে ছিল মিছিলে মিছিলে।

পাক পুলিশ বাহিনী মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ করতে প্রস্তুত নিচ্ছেন তখন উপাচার্য পুলিশকে গুলি করা থেকে নিষেধ করেন এবং ছাত্রদের চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। ছাত্ররা চলে যাওয়ার সময় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার সংবাদে শুনে ছাত্ররা পূর্ববাংলা গণপরিষদ অবরোধ করে দাবি জানায় এবং একটি দল বিল্ডিং এর মধ্যে ঢোকার চেষ্টাকালে পুলিশ অতর্কিত গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার ও শফিউল্লাহসহ অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। আন্দোলন সংগ্রাম ও শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা ফিরে পায়।

ভাষা শহিদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য শহিদ মিনার নির্মিত হয়। ধীরে ধীরে সারাদেশে শহিদ মিনার স্থাপিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে প্রস্তাবনা আকারে প্রথম ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাব ৫৬/২৬২ গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলা স্বীকৃতি পায়।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ (শহীদ মিনার)সহ সারাদেশ ও পৃথিবীর মানুষকে স্বরণ করিয়ে দেয় বাংলা ভাষার জন্যই এ আন্দোলনে জীবন দিতে হয়েছে। সেই সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশিষ্ট কলামিষ্ট সাহিত্যিক গাফফার চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একটি গান রচনা করেন আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। সেই গানের সুরকার মুলাদীর কৃতি সন্তান মুলাদী সরকারী মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নপ্রতিষ্ঠাতা ও পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড পাতারচরের বাসিন্দা বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ মরহুম মো. নাজেম আলী মিয়ার সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট সংগীত সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের মধুর কন্ঠেই গানের  সুর দেয়া হয়, যা আজাও চলমান রয়েছে।

আরো পড়ুন

দৈনিক সংগ্রামের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক অধ্যাপক আখতার ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক।। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক ছিলেন মাওলানা অধ্যাপক আখতার ফারুক। তিনি ১৯২৯ সালে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *