প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পিরোজপুরের বিসিক শিল্প নগরী। অনুন্নত অবকাঠামো, অভ্যন্তরীণ সড়ক ও সেতু সংযোগ না থাকায় দিনকে দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে শিল্পনগরীকে। এতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বড় ব্যবসায়ীরা। তাই জেলার একমাত্র শিল্পনগরী নেছারাবাদের কৌরিখাড়া বিসিক শিল্প এলাকায় সম্প্রসারণ হচ্ছে না ব্যবসা-বাণিজ্য।
অভ্যন্তরীণ সড়ক ও সেতু সংযোগ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পিরোজপুর বিসিক শিল্পনগরী।
জানা গেছে, নৌ-যোগাযোগকে কেন্দ্র করেই মূলত কৌরিখাড়া বিসিক শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৭ সালে এ নগরীটি নির্মিত হলেও চালু হয় ১৯৬৩ সালে। এর পূর্বপাশ দিয়ে বলে চলেছে সন্ধ্যা নদী। এ নদীটিই ২৫ একরের শিল্পাঞ্চটির জন্য তৈরি করেছে ঝুঁকি। নদীতে সেতু না থাকায় অগ্নিকাণ্ড হলে সময়মতো আসতে পারে না ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, বিসিক নগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীর সংযোগকারী খালটি অবৈধ দখলের কারণে ভরে যায়। এতে নৌপথে মালামাল পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হয়। আবার, খালের ওপর নির্মিত সেতু ও সড়কগুলো সরু। ফলে ব্যবসার উন্নতি ঘটছে না এ শিল্প নগরীর। নগরীর ভেতরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শিপন মিস্ত্রি বলেন, ‘প্রায় ২০ বছরের মতো এখানে ব্যবসা করছি। সেই ২০ বছর আগেও যেরকম ছিল এখনও ঠিক সেভাবেই চলছে। কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এ শিল্প নগরীতে। ফলে নতুন করে কোনো ব্যবসায়ী এখানে আসতে চায় না।’
আরেক ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী বলেন, ‘শিল্পনগরীতে প্রতিবছরই ছোট-বড় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু বারবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলোও এখন পর্যন্ত একটি ফায়ার স্টেশন এ শিল্পনগরীতে গড়ে ওঠেনি। ফলে অগ্নিকাণ্ড হলে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ উপজেলায় একটি ফায়ার স্টেশন আছে, যেটি নদীর ওপারে অবস্থিত। অগ্নি দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতে সব কিছু পুড়ে শেষ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ী বান্ধব পরিবেশ ৬০ বছরেও গড়ে তুলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।’
ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী বলেন, ‘সড়ক যোগাযোগ ভাল না থাকা ও আভ্যন্তরীন অবকাঠামো আধুনিক না হওয়ায় বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন না এখানে। এছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যা তো আছেই।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক তালুকদার বলেন, ‘ছোট-বড় মিলিয়ে ১১০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ বিসিক শিল্প নগরীতে। প্রতিদিন দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে নগরীতে। কিন্তু এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। এতে প্রচুর পরিমাণ লোডশেডিং হয়। এ কারণে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে শ্রমিকরা অলস সময় কাটায়।’
নেছারাবাদ শিল্প নগরী কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম জানান, নদী কেন্দ্রিক এ বিসিক শিল্প নগরীকে আধুনিক সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নেও তৎপর তারা। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসছে। এখনও টেন্ডার হয়নি, হলেই রাস্তার কাজ শুরু হবে। এছাড়া ড্রেনের জন্য ৩০ লাখ ও ব্রিজের জন্য ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুতই শিল্পনগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে এসব কাজ শুরু হবে।
শুধু এ জেলাই নয়, বরিশাল বিভাগের অন্যতম বৃহৎ এ শিল্পাঞ্চলে বর্তমানে ১৬৯টি শিল্প ইউনিট রয়েছে। আর ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১০টি।