বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
‘মুজিবিয়ান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের ৮৭ নেতাকর্মীকে খুঁজছেন বরিশালের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা। এই ৮৭ জনকে বিভিন্ন পদে রেখে ঘোষণা করা হয়েছে সংগঠনটির বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে এর উদ্যোক্তা তার প্রমাণও মিলেছে। অধিকাংশ অপরিচিত হলেও যে কজনকে চিহ্নিত করা গেছে তারা সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। খুব বেশি পরিচিত না হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও হয়নি। অপিরিচিত এসব নেতাদের নিয়ে চলছে মাঠ গোছানোর চেষ্টা। এমনই তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বর্তমানে চলছে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই।
৯ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ‘মুজিবিয়ান বাংলাদেশ’র বরিশাল জেলা কমিটি। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এই অনুমোদন দিয়েছেন আবু হুরায়রা মুহাম্মদ মারুফ ও আইয়ুব উদ্দিন ইমরান। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত প্যাডের ধাঁচে তৈরি করা প্যাডে দেওয়া হয় ওই অনুমোদন। প্যাডের উপরে বাম পাশে লেখা আছে ত্যাগ-সেবা-ঐক্য, ডান পাশে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু। অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের ঠিকানাও দেওয়া আছে সেখানে। পেজে ঢুকে দেখা যায়, বরিশাল জেলা কার্যালয় হিসাবে অ্যানেক্স ভবনের নাম লেখা আছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ওই ভবনের নিচ তলায় ছিল এখানকার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়। শেখ হাসিনার পলায়নের দিন ভবনটি ভাঙচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় জনতা। বর্তমানে সেটি পড়ে আছে অব্যবহৃত পরিত্যক্ত অবস্থায়।
ফেসবুক পেজে গিয়ে ১১ সদস্যের বরিশাল মহানগর মুজিবিয়ান কমিটির তালিকা মিললেও সেখানে জেলা কমিটির তালিকা দেননি পেজ অ্যাডমিন কিংবা মডারেটাররা। জেলার মতোই আবু হুরায়রা ও আইয়ুব হোসেনের স্বাক্ষরে ১৬ অক্টোবর অনুমোদন হয়েছে মহানগর কমিটি। বহু চেষ্টার পর সংগ্রহ করা জেলা কমিটিতে মেলে ৬৬ নেতাকর্মীর নাম। এদের মধ্যে ৩ জনের নামের পাশে উল্লেখ করা হয়েছে এলাকা। এরা হলেন, পটুয়াখালীর বাউফলের রাকিব হোসেন, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তানভীর আল আরাভ ও বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকিব হাসান। ৬৬ সদস্যের জেলা কমিটিতে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের প্রায় সবাই অপরিচিত। সভাপতি করা হয়েছে মো. মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলামকে। এছাড়া ৫ জনকে সহসভাপতি, ৫ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৪ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৫ জনকে বিভাগীয় সম্পাদক, ১০ জনকে বিভাগীয় উপসম্পাদক ও বাকিদের রাখা হয়েছে সদস্য পদে। ৩ মাসের জন্য এই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে লেখা রয়েছে প্যাডে।
বরিশাল মহানগরে ঘোষিত ২১ সদস্যের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান অনিক এবং জালিস মাহমুদ অপুকে। আংশিক উল্লেখ করা কমিটিতে ৪ সহসভাপতি, ২ যুগ্ম সম্পাদক, ২ সাংগঠনিক সম্পাদক, ৩ বিভাগীয় সম্পাদক ও ৮ জন সদস্যের নাম উল্লেখ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে ৮ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য মেলেনি। এদের মধ্যে জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক পদে থাকা রাকিবুল হাসান আকাশ এক সময় ছিলেন বরিশাল বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিবুল ইসলাম রয়েছেন জেলা মুজিবিয়ানের সদস্য পদে। বরিশাল মহানগর কমিটিতে নাম থাকা ২১ জনের মধ্যে ৭ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান অনিক ছিলেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি। বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহানগরের সহসভাপতি মাজাহারুল ইসলাম শোভন। এছাড়া বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্য বিশ্বজিৎ রায় দীপ্ত, আমিনুল ইসলাম, মেহেদী হাসান ও সাকিব খান আছেন মুজিবিয়ানের সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক এবং সদস্য পদে।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে নতুন নাম ও সাংগঠনিক ভিত্তি নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠে নামার এটি একটি সূক্ষ্ম চেষ্টা। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কিন্তু খুব বেশি পরিচিত নয় তারাই আছেন এই দুই কমিটিতে। এক্ষেত্রে আবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর কোথাও কোনো মামলা হয়নি তাদের। এদের কয়েকজনের বাবা কিংবা ভাই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত নেতা। তবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসাবে আলোচ্যদের পরিচিতি খুবই কম। এখন পর্যন্ত যদিও সবার বিস্তারিত পরিচয় খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি তবে খুব শিগগিরই সবকিছু পাওয়া যাবে।’ আলোচ্য ৮৭ জনের মধ্যে যে ৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের ৪ জনের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দেওয়া হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বরিশাল রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর মোর্শেদ আলম।