মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০২৫
BMCJA A
BMCJA A

বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার স্মৃতি

আযাদ আলাউদ্দীন‍॥

সরকারি ব্রজমোহন কলেজে অধ্যয়নরত সাংবাদিকদের নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত হয় ‘বিএম কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক ছিলাম আমি। ক্যাম্পাসের সকল সাংবাদিকদের একত্র করে দফায় দফায় মিটিংয়ের মাধ্যমে আমরা গঠনতন্ত্র তৈরি করি। এক্ষেত্রে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির গঠনতন্ত্র এবং তাদের প্রকাশিত বাৎসরিক স্মরণিকাগুলো থেকে নানারকম সহযোগিতা নেই।

নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আমরা সরাসরি ভোটের আয়োজন করি। নির্বাচন পরিচালনা করেন খন্দকার অলিউল ইসলাম স্যারসহ আরো দুজন শিক্ষক। আমাদের এই নির্বাচন দেখতে বরিশালের অধিকাংশ সাংবাদিক সেদিন ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। ছিলো এক উৎসব মুখর পরিবেশ। যেহেতু ক্যাম্পাস ভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন সেহেতু সিনিয়র-জুনিয়র বিষয়টি মাথায় রেখে কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়েছে। আমি যেহেতু প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক ছিলাম, স্বাভাবিকভাবেই আমার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিলো, আমার সমর্থক ভোটাররাও সেটা চাইছিলেন। কিন্তু আমি ‘বিএম কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’র বৃহত্তর স্বার্থে নিজে সভাপতি পদে প্রার্থী না হয়ে আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার তৎকালীন বরিশাল অফিসের স্টাফ রিপোর্টার মাসুম মিজান ভাইকে সভাপতি হওয়ার অনুরোধ করলাম। তিনি প্রথমে আগ্রহী ছিলেন না, পরে আমাদের অনুরোধে রাজি হয়ে সভাপতি পদে প্রার্থী হন, আমি তখন সভাপতি পদের পরিবর্তে চলে যাই সাধারণ সম্পাদক পদে। নির্বাচনের সিস্টেম ছিলো- ব্যালট প্যাপারে শুধু পদের নাম ছিলো, সেই পদগুলোর সামনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখেছেন। এভাবে যিনি যে পদের জন্য সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট পদে বিজয়ী হয়েছেন।

এই পক্রিয়ায় মাসুম মিজান সভাপতি (বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি) এবং আমি (আযাদ আলাউদ্দীন) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। আমাদের পরের বছর সভাপতি হন দৈনিক আজকের বার্তার তৎকালীন স্টাফ রিপোর্টার (বর্তমানে এটিএন নিউজের বিশেষ প্রতিবেদক) তাওহীদ সৌরভ এবং সাধারণ সম্পাদক হন অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়। পরবর্তীতে সভাপতি হন দৈনিক মতবাদের তৎকালীন স্টাফ রিপোর্টার (বর্তমানে যমুনা টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো চিফ) কাওছার হোসেন এবং সেক্রেটারি হন কালের কণ্ঠের এম সুহাদ। এভাবেই একের পর এক পেশাদার সাংবাদিকদের দিয়েই পরিচালিত হয় ‘বিএম কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’। কলেজ ক্যাম্পাসে কেন্টিনের পেছনের একটি কক্ষ আমাদের অফিস হিসেবে বরাদ্দ দেন তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নাজিম উদ্দিন স্যার।

আমরা বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্যেও কাজ করেছি। আমি যখন ‘বিএম কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার বার্তাসম্পাদক তখন ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের জন্য তিনদিনের একটি ট্রেনিংয়ের আয়োজন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। যা ছিলো অনেক ব্যয়বহুল একটি বিষয়- মানসম্মত ট্রেইনার খুঁজে বের করা, তাদের সম্মানী প্রদান,

অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ভাড়া করা আরো কতো ধরনের খরচ! সবমিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকার বাজেট। ছাত্রঅবস্থায় এই টাকার যোগান দেয়া আমাদের পক্ষে ছিলো অসম্ভব ব্যাপার। তখন ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বরিশালের দায়িত্বে ছিলেন সাংবাদিক মনিরুজ্জামান খান। এরআগে তিনি ম্যাসলাইন মিডিয়া সেন্টারে (এমএমসি) কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে কর্মরত। মনির ভাই আমার ঘনিষ্ঠ এবং প্রিয় একজন মানুষ। আমাদের এই অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি মাসুম মিজানসহ আমরা যোগাযোগ করলাম তাঁর সাথে।

তিনি বললেন- আমরা যেহেতু মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি আপনাদেরট্রেনিংয়ের সাথে যদি মানবাধিকার বিষয়টি যুক্ত করতে পারেন, তাহলে আমরা সাপোর্ট দিতে পারবো। আমরা বললাম- যে ফরমেটেই হোক ট্রেনিং হওয়া দরকার। সেই আলোকে ট্রেনিংয়ের বিষয় ঠিক করলাম ‘ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টিং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’। এরপর আমাদের ট্রেনিংয়ের স্পন্সর হয়ে গেলো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নাগরিক উদ্যোগ’।

২০০৫ সালের ১৫, ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর বিএম কলেজ লাইব্রেরি ভবনের দোতলায় সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো বিএম কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা। তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নাজিম উদ্দিন কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বিএম কলেজে অধ্যয়নরত এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত ৪০ জন সাংবাদিক তিনদিনের ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার ট্রেইনারদের মধ্যে ছিলেন- অধুনালুপ্ত আজকের কাগজের তৎকালীন বরিশাল ব্যুরো চিফ মরহুম মীর মনিরুজ্জামান, প্রথম আলোর তৎকালীন নিজস্ব প্রতিবেদক
তৌফিক মারুফ (বর্তমানে তিনি খবরের কাগজের চিফ রিপোর্টার), যায়যায় দিনের তৎকালীন বরিশাল অফিস প্রধান স্বপন খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মনিরুজ্জামান খান প্রমুখ। ট্রেনিং শেষে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে নাগরিক উদ্যোগ ও বিএম কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের সবাই এখন সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত।

আযাদ আলাউদ্দীন
সম্পাদক
দৈনিক বাংলাদেশ বাণী
বরিশাল ব্যুরো চিফ
দৈনিক নয়া দিগন্ত

আরো পড়ুন

শেরে বাংলার জীবনী পাঠ্যবইয়ে  অন্তর্ভুক্ত করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক।। শেরে বাংলার ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পরবর্তী প্রজস্মের কাছে চির স্মরণীয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *