বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
বরিশালের দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষের জন্য ভাঙা ব্রিজটি এখন চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা এই ব্রিজটির সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রকৌশল দপ্তর, ফলে স্থানীয়রা এখন এটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রাম এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ধুমচর এলাকার মধ্যে সড়কপথের সংযোগ স্থাপনকারী এই ব্রিজটি স্থানীয়ভাবে ‘ধুমচর ব্রিজ’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ব্রিজটি এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ব্রিজ থেকে যানবাহন পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি এখন মানুষও ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ব্রিজটি পার হতে চায় না। এর ফলে শিক্ষার্থী, কৃষকসহ হাজারো মানুষ যাতায়াতের কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
চাঁদপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন বলেন, “এই ব্রিজটি বরিশাল সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। তবে সংস্কারের অভাবে এটি এখন অচল হয়ে পড়েছে। ব্রিজটির মাঝখানে বড় বড় গর্ত এবং রেলিং নেই, যা যেকোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে।” তিনি আরো বলেন, “সরকারি কোনো উদ্যোগ ছাড়া এটি পুনঃনির্মাণের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে, তা জানা নেই।”
এদিকে স্থানীয় ইটভাটা মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক আরো জানান, “বছরখানেক আগে কিছু সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তা খুবই অস্থায়ী ছিল। ফলে ব্রিজটির অবস্থা একদম সংকটময় হয়ে পড়েছে।” বর্তমানে এই ব্রিজটি দিয়ে না পারলে আশপাশের মানুষকে ৪০ মিনিট ঘুরে বরিশাল যেতে হয়, আর শিক্ষার্থীরা প্রায় ১৫ মিনিট বাড়তি পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে পৌঁছায়।
এই ব্রিজের কারণে কৃষকরাও বড় ধরনের সমস্যা পোহাচ্ছেন। ভারী যানবাহন ব্রিজে উঠতে না পারায় কৃষকদেরকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। “যেমন, আমার হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি কম দামে,” বলেন তিনি।
এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, “ব্রিজের কারণে আমাদের সন্তানদেরও স্কুলে যাওয়ার পথে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এটা যে কোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।”
শাহিন হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, “ব্রিজটির রেলিং নেই, আর মাঝখানে বিশাল গর্ত রয়েছে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষত, গুরুতর অসুস্থ রোগী কিংবা গর্ভবতী নারীদের নিয়ে বরিশাল যেতে হলে আমরা বিপদে পড়ি।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের জন্য জানিয়ে আসছেন। যদিও গত বছর ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের কথা শোনা গিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী কাজী এমামুল হক আলিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
স্থানীয়রা এখন দৃঢ়ভাবে দাবি করছেন, যত দ্রুত সম্ভব ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করা হোক, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে পারে।