ফিচার ডেস্ক: বড় আকারের যানবাহন, যেমন বাস ও ট্রাক, ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত বিশাল ব্রাশ তৈরি হয় কাঠ ও নারিকেলের আঁশ (ছোবড়া) দিয়ে। এই ব্রাশ তৈরি করছেন আলাউদ্দিন, যিনি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেড় দশক ধরে এই কাজ করছেন।
এ ব্রাশ বিক্রি করে শুধুমাত্র নিজের উপার্জন নয়, বরং একাধিক নারীর জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করছেন আলাউদ্দিন। সময়ের সঙ্গে পণ্যের দাম বৃদ্ধি হলেও, বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠী গ্রামের এই কারিগর নিয়মিত বিক্রির কাজ থেকে সন্তুষ্ট। চাহিদা বৃদ্ধি পেলে, তিনি একটি ছোট ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছেন, যেখানে যন্ত্রের সাহায্যে কাঠের ফ্রেম তৈরি করা হয়।
আলাউদ্দিন জানান, চাম্বল গাছের কাঠ ও নারিকেলের আঁশ প্রধান উপাদান, যা তিনি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ইন্দেরহাট থেকে সংগ্রহ করেন। কাঠ সংগ্রহ সহজ হলেও, নারিকেলের আঁশ শুধুমাত্র সেখানে পাওয়া যায়। কাঠের টুকরোগুলো নির্দিষ্ট আকারে কেটে ফ্রেম তৈরি করা হয়, এরপর নারিকেলের আঁশ ফ্রেমের মধ্যে বসিয়ে ব্রাশ তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, একদিনে ৪০০ ব্রাশের ফ্রেম তৈরি করা সম্ভব। কাঠের ফ্রেম তিনি তৈরি করেন, আর নারিকেলের আঁশ বসানোর কাজটি পাশের নান্দুহার গ্রামের ১০-১৫ জন নারী করেন। প্রতিটি ব্রাশে নারিকেলের আঁশ বসানোর জন্য তারা দুই টাকা পান, যা তাদের সংসারের কাজে লাগে।
স্থানীয় বাজারে এ ব্রাশের চাহিদা কম হলেও, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আলাউদ্দিন বলেন, তিনি এই ব্রাশ পাইকারি বিক্রি করেন, যেখানে ১২ ডজন ব্রাশ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সব খরচ বাদে, প্রতি ব্রাশে তার লাভ হয় প্রায় পাঁচ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্লাস্টিকের বিস্তার সব কিছুই গ্রাস করলেও, গাড়ি ধোয়ার কাজে নারিকেলের আঁশ বা ছোবড়া দিয়ে তৈরি ব্রাশ ভালো কাজ করে, কারণ প্লাস্টিকের ব্রাশ দিয়ে গাড়ির গ্লাসে দাগ পড়ে এবং রং উঠে যায়। তাই পরিবহন শিল্পে এ ধরনের ব্রাশের চাহিদা এখনও রয়েছে।
আকাশ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, নারিকেলের আঁশ দিয়ে ব্রাশ তৈরি করা খুবই বিরল। বরিশাল জেলায় আলাউদ্দিন একমাত্র কারিগর হলেও, তিনি ঢাকার মতো বড় বাজারে বেশি বিক্রি করেন, যেখানে তার তৈরি ব্রাশের মান ভালো হওয়ায় চাহিদা অনেক বেশি।
এছাড়া, আলাউদ্দিনের কাজ শুধু তার নিজের উপার্জন নয়, গ্রামের নারীদের জন্য জীবিকার সুযোগ তৈরি করেছে, যা স্থানীয় জনগণের প্রশংসা অর্জন করেছে।