ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (দোলন মুন্সি), যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালতলা বাজারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্যানেল চেয়ারম্যানকে সরানোর দাবিতে মিছিল শেষে বিক্ষোভকারীরা ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানরা পলাতক থাকায় স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে নিরপেক্ষ প্রশাসক নিয়োগের আবেদন করেছিলেন। এর পর প্রশাসক নিয়োগে কাজ চালানো হলেও, যুবলীগ নেতা দোলন মুন্সি তার ভাইদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করিয়ে ভুয়া প্যানেল রেজুলেশন তৈরি করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। হাইকোর্ট থেকে ইউনিয়নের প্রশাসকের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে এবং ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, দোলন মুন্সিকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের এই নেতা প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: শহিদ খান, সাধারণ সম্পাদক মো: সুলতান আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো: মাইনুল ইসলাম বাবুল, যুবদল নেতা শহিদ তালুকদার, ছাত্রদল সভাপতি সজল তালুকদারসহ অন্যান্য নেতারা।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের দোসরকে ইউনিয়নের দায়িত্বে দেখতে চাই না। আমরা সুবিদপুর ইউনিয়নে পুনরায় প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতাকে প্যানেল চেয়ারম্যান করা হয়েছে, যা অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য।” তারা আরও বলেন, “ভবিষ্যতে বড় আন্দোলন করা হবে।”
এদিকে, সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তারা মনে করছেন, প্রশাসনিক পদে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকলে ইউনিয়নের সুষ্ঠু উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কিছু স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, দোলন মুন্সি তার ভাইদের ছত্রছায়ায় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একত্রিত করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
এ বিষয়ে, দোলন মুন্সি তার দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে প্রায় ২০০ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে দাওয়াত দেওয়া হয়। এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির মিছিল চলাকালে, দোলন মুন্সি তার আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থান নেন, কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিনও বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করেছেন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
শেষে, বিক্ষোভকারীরা ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বিষয়টি কীভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: শহিদ খান বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য ছিল, দোলন মুন্সি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাওয়াত দিয়ে গোপন মিটিং করার পরিকল্পনা করছে। আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং স্বৈরাচার সরকারের দোসরকে মানি না।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নজরুল ইসলাম বলেন, “হাইকোর্টের আদেশের ভিত্তিতে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং তা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। উপর মহলের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”