নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কথা বলতে শেখার আগেই মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছে দুই বছর বয়সী শিশু ইয়ানা। অপলক দৃষ্টিতে সারাক্ষণ ছবির হাতে মাকে খুঁজে বেড়ায় সে। কখনো আবার কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে যাওয়ার বায়না ধরে। তবে মা আর কখনোই ফিরবে না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন শিশু ইয়ানার মা আজমেরী মোনালিসা জেরিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬জুন ২৭তম জন্মদিন ছিল বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জেরিনের। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ওই রাতেই বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপরের দিন তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে জেরিনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।

রাকিবুল ইসলাম রাজন শিশুটির বাবা বলেন, জেরিনসহ আমি গত ৪তারিখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। তবে হাসপাতাল থেকে আমরা তেমন কোনো চিকিৎসা পাইনি, শুধু নাপা ছাড়া। যেদিন ভর্তি হয়েছি ওই দিন জেরিনের প্লাটিলেট ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার। পরবর্তীতে প্লাটিলেট কমে ৪৪হাজারে পৌঁছায়। তবে ঈদের ছুটি থাকায় হাসপাতালে তেমন কোনো নার্স এবং চিকিৎসক ছিলোনা। এছাড়া জেরিনের দুই হাজার প্লাটিলেট বেড়ে ৪৬হাজার হলে বাড়িতে চলে আসি আমরা। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন জেরিন। এরপর তাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাই। ওই সময় জেরিনকে অক্সিজেন লাগাতে গিয়ে আমাদেরকে হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে। পরে কিছুক্ষনের মধ্যে আমার কোলে বসেই জেরিনের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার দুই বছরে বাচ্চাটা এখন রাতে ঘুমাতে পারে না। ওর মা যেখানে বসে কেক বানাতো বারবার আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে চায়। যেখানে ওর মা ঘুমাতো সেদিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মায়ের খোঁজ করে, মায়ের স্পর্শ পেতে চায়। বাবা হয়ে বাচ্চার মুখের দিকে এখন আমি তাকাতে পারি না। ও কি বলতে চায় আমি তা বুঝি, কিন্তু ওরে আমি কিছু বোঝাতে পারি না।
উল্লেখ্য, বরগুনায় মহামারী আকার ধারন করেছে ডেঙ্গু। মৃত্যুও বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর। বরগুনার ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেলে হাসপাতালের অথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ন্টায় বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৪জন। বর্তমানে হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৪১জন। এবছর এখন পর্যন্ত ১হাজার ৭৫৯জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৬জনের।