বুধবার, জুলাই ১৬, ২০২৫

মাকে খুঁজে ফিরছে ২বছরের কন্যা শিশু ইয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

কথা বলতে শেখার আগেই মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছে দুই বছর বয়সী শিশু ইয়ানা। অপলক দৃষ্টিতে সারাক্ষণ ছবির হাতে মাকে খুঁজে বেড়ায় সে। কখনো আবার কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে যাওয়ার বায়না ধরে। তবে মা আর কখনোই ফিরবে না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন শিশু ইয়ানার মা আজমেরী মোনালিসা জেরিন।

জেরিন বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত জাফরুল হাসান ফরহাদের ছোট মেয়ে। তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ও জেরিন ক্রেকার্স নামে কেক তৈরির প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬জুন ২৭তম জন্মদিন ছিল বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জেরিনের। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ওই রাতেই বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপরের দিন তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে জেরিনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।

এদিকে স্ত্রীর মৃত্যু শোকে বুক চাপা কষ্টে বিদীর্ণ স্বামী রাকিবুল ইসলাম রাজন। দুই বছর বয়সী শিশু সন্তানকে মায়ের অভাব বুঝতে না দিয়ে আগলে রাখছেন নিজের কাছে। প্রায় সময়ই মা হারানো দুধের সন্তানের কান্না থামাতে গিয়ে নিজের স্ত্রী হারানোর কষ্ট  গোপন করতে হচ্ছে তাকে। রাজনের জীবন এখন আর বেঁচে থাকার নয়, বরং মায়ের ভালোবাসা দিয়ে অবুঝ সন্তানকে বড় করতে টিকে থাকার সংগ্রাম।

 

সরেজমিনে শিশু ইয়ানার বাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, ঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতিবিজড়িত জেরিনের অনেক ছবি। আর এ ছবির দিকে তাকিয়ে মাকে খুঁজে বেড়ায় ছোট ইয়ানা। ইয়ানার খালা সালমা বলেন, মা হারানো কষ্ট ইয়ানা হয়তো প্রকাশ করতে পারেনা। তবে সব বোঝে, কিন্তু মুখে কিছু বলার ভাষা নাই। রাতে ঘুমায়না, সারাক্ষণ শুধু মাকে খোঁজে। মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য বাবাকে ধরে টানাটানিও করে।

রাকিবুল ইসলাম রাজন শিশুটির বাবা বলেন, জেরিনসহ আমি গত ৪তারিখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। তবে হাসপাতাল থেকে আমরা তেমন কোনো চিকিৎসা পাইনি, শুধু নাপা ছাড়া। যেদিন ভর্তি হয়েছি ওই দিন জেরিনের প্লাটিলেট ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার। পরবর্তীতে প্লাটিলেট কমে ৪৪হাজারে পৌঁছায়। তবে ঈদের ছুটি থাকায় হাসপাতালে তেমন কোনো নার্স এবং চিকিৎসক ছিলোনা। এছাড়া জেরিনের দুই হাজার প্লাটিলেট বেড়ে ৪৬হাজার হলে বাড়িতে চলে আসি আমরা। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন জেরিন। এরপর তাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাই। ওই সময় জেরিনকে অক্সিজেন লাগাতে গিয়ে আমাদেরকে হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে। পরে কিছুক্ষনের মধ্যে আমার কোলে বসেই জেরিনের মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার দুই বছরে বাচ্চাটা এখন রাতে ঘুমাতে পারে না। ওর মা যেখানে বসে কেক বানাতো বারবার আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে চায়। যেখানে ওর মা ঘুমাতো সেদিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মায়ের খোঁজ করে, মায়ের স্পর্শ পেতে চায়। বাবা হয়ে বাচ্চার মুখের দিকে এখন আমি তাকাতে পারি না। ও কি বলতে চায় আমি তা বুঝি, কিন্তু ওরে আমি কিছু বোঝাতে পারি না।

উল্লেখ্য, বরগুনায় মহামারী আকার ধারন করেছে ডেঙ্গু। মৃত্যুও বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর। বরগুনার ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেলে হাসপাতালের অথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ন্টায় বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৪জন। বর্তমানে হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৪১জন। এবছর এখন পর্যন্ত ১হাজার ৭৫৯জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৬জনের।

আরো পড়ুন

অরাজকতা ও আইন-শৃঙ্খলা অবনতির প্রতিবাদে বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক।। ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা ও সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে বরিশাল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *