নিজস্ব প্রতিবেদক
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পরমহল গ্রামে সরকারি স্থাপনা ও সামাজিক সম্পদ নিয়ে একের পর এক বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার অর্ধশত বছরের পুরনো ‘পরমহল ইউথ ক্লাব’ বিক্রি করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মো: গিয়াস খলিফা। তিনি ঝালকাঠি সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য এবং পরমহল গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার খলিফার ছোট ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহান বিজয় দিবসের দিন (১৬ ডিসেম্বর) দক্ষিণ পরমহলের ঐতিহ্যবাহী ‘পরমহল ইউথ ক্লাব’ ভেঙে ভাঙারির কাছে বিক্রি করেন গিয়াস খলিফা। ক্লাব বিক্রির বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করা হয়। তবে জনরোষের মুখে পড়ে তিনি পুনরায় ওই স্থানে বিল্ডিং আকারে ক্লাব নির্মাণের কথা জানান।
এলাকাবাসীর দাবি, ক্লাবটি যে জমিতে অবস্থিত সেটির মালিকানা জটিলতা থাকায় এবং মালিকের আপত্তি উপেক্ষা করে সেখানে নতুন করে নির্মাণ করা সম্ভব নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, “ক্ষমতার জোরে এলাকাবাসীর ব্যবহৃত ইউথ ক্লাবটি ভাঙারির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মোল্লাবাড়ি সরকারি ব্রিজের মতোই এবারও একই কৌশল নেওয়া হয়েছে। এ কাজে সহযোগী হিসেবে কৃষক লীগের মো: মহসিনের নামও শোনা যাচ্ছে।” মহসিন নিজেকে বর্তমানে ইউনিয়ন কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবী করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে যে ক্লাবটি দখল করতে পারেনি, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই সেটি দখল করে নিয়েছে।”
এলাকার একাধিক বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ক্লাব বিক্রির বিষয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই বলে হুমকি দিয়েছেন গিয়াস খলিফা। তাদের আরও দাবি, এর আগেও ক্লাবের টেলিভিশন বিক্রি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সর্বশেষ ক্লাবটি সংস্কার করেছিলেন প্রবাসী আল জামান। ওই সময় তিনি অর্ধলক্ষাধিক টাকা ব্যায় করেছেন। এ ব্যাপারে প্রবাসী আল জামান বলেন, এই ক্লাবটি একটি অরাজনৈতিক ক্লাব। এটি কারো একার পক্ষে দখল বা বিক্রি করার ক্ষমতা নেই। ক্লাবটি যারা বিক্রি করেছেন আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দখলসন্ত্রাসকে রুখে দেয়ার আহবান জানাই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতা মোহাম্মদ মহসিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি নেতা মো: গিয়াস খলিফা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ক্লাবটি বিল্ডিং আকারে নির্মাণ করার উদ্দেশ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। তবে ওই স্থানে নির্মাণ করা যাবে কি না, তা নিশ্চিত নই। বিক্রির টাকা আত্মসাৎ কিংবা মোল্লাবাড়ি সরকারি ব্রিজ বিক্রির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
এদিকে, গিয়াস খলিফার ‘করাল থাবা’ থেকে ঐতিহ্যবাহী ইউথ ক্লাবটি রক্ষায় বিএনপি নেতৃত্বসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পরমহলবাসী। তারা অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও ক্লাবটি জনস্বার্থে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।