শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

ভোলা জেনারেল হাসপাতালের রোগীরা তেলাপোকা-ছারপোকার আতঙ্কে অতিষ্ঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

ভোলা জেলার ৭উপজেলার প্রায় ২০লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল জেলা শহরের ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু রোগ নিরাময়কারী এ সরকারি হাসপাতালটি যেন এখন রোগ বিস্তারের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এমনকি তেলাপোকার ভয়ে নার্সরা পর্যন্ত রোগীর কাছে আসতে ইতস্তত বোধ করেন। এমনি অভিযোগ এখানে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের।

হাসপাতালে তেলাপোকা-ছারপোকার কামড়ে অতিষ্ঠ সবাই। এর জন্য হাসপাতালে দায়িত্বরতদের দুষছেন তারা। তবে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০শয্যার এ জেনারেল হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেন প্রায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী। অন্যদিকে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেন প্রতিদিন ১হাজার থেকে ১২শ জন রোগী।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালটিতে। হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড, পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডসহ পুরো হাসপাতালের প্রতিটি শয্যার নিচে, দেয়ালে স্থাপনকৃত টাইলসের ফাঁকে ও মেঝেতে তেলাপোকা-ছারপোকা বাসা বেঁধেছে। এসব পোকা রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রতিনিয়ন কামড়াচ্ছে। এছাড়া রোগীদের খাবার নষ্ট করছে। রোগীরা সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হন রাতে। এ সময় পোকার উপদ্রব বাড়ে বহুগুণে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে হাসপাতালে বাধ্য হয়েই চিকিৎসা নিতে হয় তাদের। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এ সমস্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

কথা হয় বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল মতিন ও বিবি রহিমার সঙ্গে। তারা শারীরিক কিছু জটিলতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, তেলাপোকা-ছারপোকাসহ আরও কত যে পোকা আছে। এদের জ্বালায় বেডে ঠিকমতো শুয়ে থাকতে পারি না। হাসপাতালে এসেছি সুস্থ হতে, সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে এখন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

সদর উপজেলার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ও মো.মনির হোসেন বলেন, গত ৪দিন ধরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। রাতে যখন ঘুমাই তখন তেলাপোকা এসে কামড়ায়। আমাদের খাবারে মধ্যেও পোকা ঢুকে। সে খাবার আবার বাধ্য হয়ে খেতে হয়।

নারগিছ বেগম ও সুরমা আক্তার বলেন, হাসপাতালটি অপরিচ্ছন্ন এবং পোকামাকড়ে ভরা। রোগীরা সুস্থ হবে কী? এখানে চিকিৎসা নিতে এসে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। শুধু আব্দুল মতিন, বিবি রহিমা, মনির হোসেন, সুরমা ও নারগিছ নয়। একই দুর্দশা অন্যান্য রোগীদেরও।

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামী নুর উদ্দিনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তার স্ত্রী জান্নাত বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীর ব্লাড ক্যান্সার। এই বেডে এত তেলাপোকা যে, জরুরি প্রয়োজনে নার্সদের ডাকলেও তারা আসতে চান না তেলাপোকার ভয়ে।

মো. সাইয়েদ আলী ও মো. আরিফ বলেন, যেদিকে তাকাই সেদিকে ময়লা ও পোকামাকড়। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। রোগ নিরাময়ের স্বার্থে রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া উচিত।

তেলাপোকা নির্মূলের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ভোলা ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তায়েবুর রহমান। তিনি বলেন, তেলাপোকা মারার জন্য ইতোমধ্যে স্প্রে ব্যবহারের ফলে অনেকাংশে কমে গিয়েছে। রোগীর চাপ বেশি থাকায় আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি রুম খালি করে পোকা নির্মূলের ওষুধ প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ভালো ফলাফল পাচ্ছি। আশা করছি আস্তে আস্তে সব ওয়ার্ডে পোকা নির্মুল করতে পারব। তবে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *