রিয়াজ ফরাজি।।
মানবিক আবেদন
ভোলার বোরহানউদ্দিনের পক্ষিয়া ইউনিয়নের ছোট এক গ্রামে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে এক কন্যা শিশু—নুহামনি। আজ তার পাঁচ বছর বয়স। কিন্তু জন্মের পর থেকেই অন্য সব শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবন নয়, তাকে লড়তে হচ্ছে এক অজানা ও বিরল চর্মরোগের সঙ্গে।
নুহামনির মুখমণ্ডল, হাত-পা, পিঠসহ সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে আছে বড় বড় ফোসকা, ঘাঁ পাঁচরা ও খসখসে ত্বক। শরীরজুড়ে চুলকানি ও ব্যথা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারটি চিকিৎসার জন্য একাধিকবার স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করলেও রোগের সঠিক নাম ও প্রতিকার এখনও মেলেনি।
বাবা-মায়ের সংসারে অভাব অনটনের টানাপোড়েনে শিশু নুহামনি যেনো এক ভারী বোঝা হয়ে আছে।
নুহামনির বাবা আলামিন মিয়া একজন দিনমজুর। সামান্য আয়ে চলে তাদের সংসার। বাবা মায়ের কণ্ঠে ও চোখে মুখে রয়েছে অসহায়ত্বের ছাপ।

মা শিল্পী বেগম জানান “মেয়ে জন্মের পর থেকেই শরীরটা আলাদা রকম। প্রথমে ভাবছিলাম, সময় গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন ওর যন্ত্রণা সহ্য হয় না। কোনো ভালো ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নেই।”
আদরের নাতনিকে নিয়ে অঝোরে কাদঁছেন দাদী বিনু বেগম। নাতনিকে আগলে রেখে দেখভাল করেন তিনি। দাদী বিনু বেগম বলেন, ” জন্মের পর থেকে তাকে ভালো করে গোসল করাতে পারেননি। এমনকি শরীরে লাগাতে পারেননি সাবানও। ব্যাথা আর চুলকানির কারণে রাতে ঘুমাতে পারেন না নুহামনি।”
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের দেওয়া ঔষধেই চলছে শিশু নুহামনির চিকিৎসা। কিন্তু, তাতে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে কিংবা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ এলেও অর্থাভাবে থেমে গেছে চিকিৎসার পথ।
স্থানীয়রা বলেন, গ্রামের সব শিশুদের থেকে আলাদা নুহামনি। তার খেলাধুলার সাথীরা যখন একত্রিত হয়ে খেলা করে, তখন সে ঘরের কোনে বন্দী থাকে। তার শরীরের ভয়াবহতার কারণে শিশুরা তার সাথে মিশে না। তার চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবান ও সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তারা।

পক্ষিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা প্যানেল চেয়ারম্যান মো.হুমায়ুন কবির জানান, ‘মেয়েটার খোঁজ নিচ্ছি এবং আবেদন করে সমাজসেবার অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা মেয়েটাকে যথাযথ সাহায্য করার চেষ্টা করছি।’
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, “এটি একটি মারাত্মক চর্মরোগ। উন্নত চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশুটিকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
উন্নত চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন নুহামনি, এমনটাই পত্যাশা পরিবারের। তাই, নুহামনির জীবনের জন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা, যা তার পরিবারের সাধ্যের বাইরে। সমাজের মানবিক মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকার এগিয়ে এলে হয়তো নতুন এক জীবন পেতে পারে এই অসহায় শিশুটি।
শিশুটির পরিবার চিকিৎসার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। যে কেউ সহায়তা দিতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: ০১৩০৫৩৭৮৭৮০
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।