শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

চরিত্র

ইএইচএস মুন্সী এনাম।। 

আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি মানুষের সার্বিক আচরণ ও প্রাকৃতিক গুনাবলীর সমষ্টিকে চরিত্র বলে। চরিত্রের আরবি প্রতিশব্দ খুলুকুন। এর বহুবচন আখলাক। আখলাক বা চরিত্র তিন প্রকার।

এক. খুলুকে হাসান।

খুলুকে হাসান বলা হয়, ভালো কাজের প্রতিদান ভালো কাজের মাধ্যমে দেওয়া, খারাপ কাজের প্রতিশোধও সমানভাবে নেওয়া।

দুই. খুলুকে কারিম।

খুলুকে কারিম বলা হয়, খারাপ কাজের প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া।

তিন. খুলুকে আজিম।

খুলুকে আজিম বলা হয়, খারাপ কাজের প্রতিদান ভালো কাজের মাধ্যমে দেওয়া।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন খুলুকে আজিমের গুণে গুণান্বিত। তিনি কারও থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। সবাইকে ক্ষমা করে দিতেন। এমনকি কেউ তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করলেও তিনি এর প্রতিদান দিতেন ভালো আচরণের মাধ্যমে। কোরআনে তার চরিত্রকে ‘মহান চরিত্র’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা তাকে উত্তম চরিত্রের রোল মডেল বানিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব-২১)।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(হে নবী) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম-৪)

আয়েশাকে (রা.) মহানবীর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘কোরআনই হলো রাসুলের চরিত্র।’ (আদাবুল মুফরাদ)।
কোরআনের প্রতিটি বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। এতে তিনি কোনো ধরনের কষ্ট-ক্লেশ ও চাপ অনুভব করতেননা।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। যে তোমার সঙ্গে যে খারাপ ব্যবহার করে, তুমি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।’ এ হাদিস থেকেও তার মহান চরিত্রের সুবাস পাওয়া যায়।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মুসাফাহ করত, ওই ব্যক্তি স্বীয় হাত টেনে নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি নিজের হাত টেনে নিতেন না। সে স্বীয় মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি নিজের মুখ ফিরিয়ে নিতেন না। তিনি কখনো সামনে উপবিষ্ট লোকদের দিকে পা দুটো প্রসারিত করে বসতেন না।’ (সুনানে তিরমিজি)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘এক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাসুল (সা.) একটি ছায়াদার বাবলাগাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তরবারিটি ঝুলন্ত ছিল গাছের ডালে। আমরাও রাসুল (সা.) থেকে খানিক দূরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। শত্রুপক্ষের একজন এটাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে সতর্ক পায়ে এগিয়ে আসে রাসুল (সা.)-এর দিকে। ঝুলন্ত তরবারি হাতে নিয়ে তার মাথা বরাবর দাঁড়িয়ে হাঁক ছেড়ে বলে, আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে মুহাম্মদ? রাসুল (সা.) নির্ভীক কণ্ঠে বলেন, আমার আল্লাহ আমাকে বাঁচাবেন। সঙ্গে সঙ্গে তার হাত থেকে তরবারিটি পড়ে যায়। তিনি তা উঠিয়ে বলেন, এখন আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে? লোকটি এবার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কাকুতি-মিনতি শুরু করে। রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করবে? সে বলে, না। তবে, আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো যুদ্ধে অংশ নেব না। রাসুল (সা.) তাকে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা ও মহানুভবতার উৎকৃষ্ট সাক্ষী হয়ে সে ফিরে যায়।’ (হেদায়াতুর রুয়াত)

রাসুল (সা.) অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবাশুশ্রুষা করতেন। তার এ কাজ শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অসুস্থতায় তিনি এগিয়ে যেতেন। তাদের খোঁজখবর রাখতেন।

আনাস (রা.) বলেন, ‘মদিনার এক ইহুদি বালক রাসুল (সা.)-এর খেদমত করত। বালকটি একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি তাকে দেখতে যান। বালকটিকে দেখে রাসুল (সা.) বুঝতে পারেন সে জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তাই শিয়রে বসে রাসুল (সা.) তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নিজের বাবার দিকে। এতে বাবার সম্মতি আছে কি না, বুঝতে চেষ্টা করে। পিতা যদিও ইহুদি, কিন্তু তার জানা ছিল মুহাম্মদ (সা.) সত্য নবী। ছেলেকে সে ইসলাম গ্রহণের অনুমতি দেয়। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে বালকটি দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। রাসুল (সা.) তার ইসলাম গ্রহণে অনেক খুশি হন এবং আল্লাহতায়ালার প্রশংসাবাক্য পাঠ করেন।’ (সহিহ বোখারি : ১৩৫৬)

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানোর সময় ওসিয়ত করতে করতে শেষ ওসিয়ত হিসেবে বলেন, তুমি অবশ্যই তোমার চরিত্রকে সুন্দর করবে। কারণ মানুষের মধ্যে যার চরিত্র বেশি সুন্দর সে দ্বীনদারীর দিক থেকে তাদের মধ্যে উত্তম। -মুসনাদে আহমাদ: ২১৯৮৯

সৎ চরিত্র কিয়ামতের দিন নাজাতের কারণ হবে। কিয়ামতের দিন মানুষের আমলের ভিত্তিতে তার স্থায়ী পরিণতি জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। যার নেক আমলের পাল্লা ভারি হবে, সে হবে জান্নাতি। আর যার গোনাহের পাল্লা ভারি হবে, সে হবে জাহান্নামি।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *