মোঃ জামাল উদ্দিন।।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম — মানবতার আলোকবর্তিকা, ন্যায় ও শান্তির প্রতীক।
তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু যখন সেই প্রিয় নবীর মর্যাদায় আঘাত আসে, তখন ঈমানদারদের হৃদয় চুপ করে থাকতে পারে না।
২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর, ভোলার বোরহানউদ্দিনে তেমনই এক ইতিহাস রচিত হয়- যেখানে নবীর মর্যাদা রক্ষায় শান্তিপূর্ণ জনতার উপর চলে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ।
এই ঘটনাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে স্থায়ী হয়ে আছে “রাসুলপ্রেমে শহীদ বোরহানউদ্দিন” নামে।
ঘটনার সূত্রপাত: ২০১৯ সালের ১৮অক্টোবর।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার এক তরুণ, ‘বিপ্লব চন্দ্র শুভ’, তার ফেসবুক আইডি থেকে ইসলামবিদ্বেষী ও প্রিয় নবী (সা.)-এর নামে কুরুচিপূর্ণ বার্তা পাঠায়। বন্ধু তালিকার বেশ কয়েকজনের ইনবক্সে সেই বার্তা পৌঁছে গেলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। খবরটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।

ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে, তবে তারা সংঘাত নয়—শান্তিপূর্ণভাবে নবীর মর্যাদা রক্ষায় প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতি নেয়।
রক্তাক্ত রবিবার ২০অক্টোবর ২০১৯ : ২০ অক্টোবর (রবিবার) সকালে বোরহানউদ্দিনের ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হন হাজারো তাওহিদী জনতা। তাদের একমাত্র দাবি—প্রিয় নবীর ইজ্জত রক্ষার সুষ্ঠু বিচার।
কিন্তু শান্তিপূর্ণ সেই সমাবেশ মুহূর্তেই পরিণত হয় রক্তাক্ত বিভীষিকায়, হঠাৎ পুলিশের গুলিতে ময়দান কেঁপে ওঠে থর থর।
ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে সেদিন শহীদের মিছিলে যোগ হয় চারটি তাজা প্রাণ। তারা হলেন, হাফেজ মাহফুজ, হাফেজ মাহবুব ও হাফেজ মিজান, মোঃ শাহীন। আহত হন দুই শতাধিক তাওহিদী জনতা। কেউ হারান চোখের আলো, কেউ হারান পা বা বাকশক্তি—তবুও তারা বলেন, “আমাদের এই ক্ষত নবীপ্রেমের সৌভাগ্য।
শহীদ পরিবারের নীরব কান্না:
যে মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, তিনি উচ্চস্বরে কাঁদতেও পারেননি।
শাসকগোষ্ঠীর ভয়, হুমকি ও দমননীতির কারণে শহীদ পরিবারের শোক ছিল গোপন।
তাদের জানাজায় ছিল না কোনো রাজনৈতিক জাঁকজমক—
ছিল শুধু নীরব কান্না, কুরআনের তেলাওয়াত আর অশ্রুসিক্ত দোয়া।

ঈমান ও ভালোবাসার প্রতীক:
বোরহানউদ্দিনের এই শহীদরা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ ছিলেন না।
তারা ছিলেন সাধারণ মানুষ, কিন্তু হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন অসাধারণ সাহস ও রাসুলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।
তাদের ত্যাগ প্রমাণ করে—
নবীর ইজ্জতের চেয়ে বড় কিছু নেই।
তারা দেখিয়ে গেছেন, মুসলমানের আসল শক্তি অস্ত্রে নয়,
বরং ঈমানে ও নবীর প্রতি ভালোবাসায়।
পৃথিবীর সকল ফুটন্ত লাল গোলাপই যেন শহীদদের রক্তের প্রতিচ্ছবি।
সমাজ ও জাতির জন্য শিক্ষা:
এই রক্তাক্ত ঘটনা আজও আমাদের সামনে প্রশ্ন রেখে যায়—
আমরা কি সত্যিই নবীপ্রেমিক?
আমরা কি নবীর মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ?
নাকি রাজনীতি ও ভয়ের কাছে হারিয়ে ফেলেছি আমাদের ঈমানী পরিচয়?
শহীদদের রক্ত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—
নবীর প্রতি ভালোবাসাই মুসলমানের জীবনের শক্তি।
এই চেতনা ধরে রাখতে হলে সমাজে ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে,
সুন্নাহর চর্চা ও নবীর আদর্শ অনুসরণে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ছয় বছর পরও অম্লান স্মৃতি:
আজ ২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর—ঠিক ছয় বছর পর।
বোরহানউদ্দিনের মাটিতে সেই রক্তের দাগ আজও শুকায়নি।
মুক্ত বাতাসেও ভেসে আসে শহীদদের ত্যাগের গন্ধ, তাদের রুহ যেন আজও আহ্বান জানায়—
“আমাদের ত্যাগ বৃথা যেতে দিও না।”
তাই আমাদের দায়িত্ব—
নবীর ভালোবাসাকে হৃদয়ে ধারণ করা,
শহীদদের ইতিহাস সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মকে জানানো,
আর সমাজে ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।
উপসংহার:
বোরহানউদ্দিনের চার শহীদ—মাহফুজ, শাহীন, মাহবুব ও মিজান—
তারা চলে গেছেন, কিন্তু তাদের রক্ত আজও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ঈমানের দ্বীপ্ত আগুন জ্বালিয়ে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাতিলের কাছে কখনো মাথা নত না করতে ।
যতদিন আকাশে সূর্য উঠবে, যতদিন আজানের ধ্বনি ভেসে আসবে মিনার থেকে,
তাদের নাম উচ্চারিত হবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
বোরহানউদ্দিনের শহীদরা প্রমাণ করেছেন — রাসুলের ইজ্জতের চেয়ে বড় কিছু নেই।
এই সত্যই আমাদের নবীপ্রেমিক জাতির চিরন্তন গর্ব, ইতিহাস ও পরিচয়।
হে আল্লাহ! শহীদদের রুহকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে স্থান দিন।
আমাদের হৃদয়ে নবীর প্রেম,ভালোবাসা সদা জাগ্রত রাখুন।
আমিন।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।