বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্টরোড জাটকা ইলিশে সয়লাব। বাজারের মাছ বিক্রেতারা জাটকা ইলিশ হাঁকডাক দিয়েই বিক্রি করছেন। অথচ গত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাসের জন্য সারাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে জাটকা ধরার ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এর লক্ষ্য মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় যেসব ইলিশ ডিম ছেড়েছে, সেগুলো যাতে বড় হওয়ার সুযোগ পায়।
রোববার (১৭ নভেম্বর) বরিশাল জেলা পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌ ও সড়কপথে মাছ নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব মাছের দুই-তৃতীয়াংশই জাটকা বা ১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ।
জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার এই আট মাসে জাটকা আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন বন্ধে জেলা-উপজেলার মাছঘাট, বাজার ও জেলেপল্লিগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু এরপরও বরিশালে জাটকা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ হচ্ছে না। জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ। এতে ভরা মৌসুমে ইলিশ-সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আড়তদার সুমন বলেন, গত ১০/১১২ দিন ধরে জাটকায় পুরো মার্কেট ভরে গেছে। এখন বাজারে যে মাছ আসছে তার বেশির ভাগই নদীর। পোর্ট রোডে ১০০ মণ মাছ এলে তার মধ্যে ৯০ মণই জাটকা। জাটকাগুলো বড় হতে না দিলে আগামী মৌসুমে ইলিশের সংকট দেখা দিতে পারে।
সফিক নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে দেখছি সব দোকানেই জাটকা। জাটকাগুলো যদি না মারা হত ভবিষ্যতে আমরা বড় ইলিশ খেতে পারতাম। আমি মনে করি ইলিশ বিজ্ঞানীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। প্রতিবছর তো ইলিশ একই সময়ে ডিম ছাড়বে না। পরিবেশ, আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ডিম ছাড়ার সময় শনাক্ত করা উচিত।
জেলে সংগঠকেরা বলছেন, মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ জাটকা উৎপাদন দেখিয়ে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। কিন্তু ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না। সংকটের কারণে কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে নেই। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলাঘেঁষা মেঘনা হলো জাটকা আহরণের মূল কেন্দ্রস্থল। এখানকার স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইলিশঘাটের মালিক। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় শত শত জেলে প্রতিদিন মেঘনায় বেপরোয়াভাবে জাটকা নিধন করেন।
বরিশাল পোর্টরোড আড়তদার মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কামাল সিকদার বলেন- আমরা সকল ব্যবসায়ীদের জাটকা বিক্রি করতে নিষেধ করেছি। এরপরেও যদি কেউ জাটকা বিক্রি করে তার দ্বায়ভার তাকেই নিতে হবে।
বরিশাল পোর্টরোড আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ জহির হোসেন বলেন- জাটকা বিক্রির জন্য বাজারের ব্যবসায়ীদের নিষেধ করা হয়েছে। আমি ঢাকায় আছি, তবুও যদি কেউ জাটকা বিক্রি করে তাহলে বরিশালে এসে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু তার আড়তেই জাটকা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এ বছর বড় মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা মৌসুমের প্রয়োজন মেটাতে এখন বড়-ছোট সব মাছ ধরে ফেলছে। এর খারাপ প্রভাব অবশ্যই পড়বে। আমরা মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে জানিয়েছি যেন নির্ধারিত সময় নয় জাটকা আহরণ বন্ধে সারা বছরই অভিযান প্রয়োজন।