বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর প্রথমে হাজার হাজার মানুষ যে স্থানে ছুটে যায়, সেটি হলো সায়দনায়া কারাগার। ভয়াবহতার জন্য এ জায়গাটি এতটাই কুখ্যাত ছিল যে দীর্ঘকাল ধরে এটি ‘কসাইখানা’ নামে পরিচিত ছিল।
গত দু’দিন ধরে সবাই দামেস্কের ঠিক বাইরে গোপন বিস্তৃত এই কারাগারে বহু বছর বা এমনকি কয়েক দশক আগে নিখোঁজ হওয়া প্রিয়জনদের চিহ্ন খুঁজে ফিরছে।
কিন্তু সোমবার তাদের আশা হতাশায় পরিণত হয়। লোকজন বারান্দার সারিবদ্ধ ভারী লোহার দরজা খুলে ভেতরে সেলগুলো খালি দেখতে পায়। স্লেজহ্যামার, বেলচা এবং গ্রিল দিয়ে পুরুষরা যেখানে গোপন অন্ধকূপ ছিল বলে মনে করেছিল সেখানকার মেঝে আর দেয়ালে গর্ত করে তারা কিছুই খুঁজে পায়নি।
রোববার দামেস্কের পতনের পর বিদ্রোহীরা সায়দনায়া সামরিক কারাগার থেকে বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দিয়েছে। এরপর থেকে প্রায় কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বাশার আল-আসাদের শাসনকালে এবং বিশেষ করে ২০১১ সালের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ভিন্নমতের যে কোনো ইঙ্গিতই কারো জন্য সায়দনায়ায় বন্দী হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। খুব কম মানুষই সেখান থেকে ফিরে এসেছে।
২০১৭ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর হিসাব অনুযায়ী, ওই সময় সমাজের সকল ক্ষেত্র থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষকে আটক রাখা হয়েছিল। এতে বলা হয়, তারা কার্যত মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রস্তুত ছিল।
মুক্তি পাওয়া বন্দী ও কারা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, ঘন ঘন মৃত্যুদণ্ডে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বন্দীদের ওপর ক্রমাগত নির্যাতন চলত, তাদেরকে তীব্র মারধর এবং ধর্ষণ করা হতো। প্রায় প্রতিদিনই কারারক্ষীরা রোগ বা অনাহারে রাতে মারা যাওয়া বন্দীদের সেলগুলোতে অনুসন্ধান চালাত।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, কিছু বন্দী মানসিক রোগে ও অনাহারে মারা গেছে।
ছেলেকে সামরিক চাকরি থেকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসমাইল দামেস্কের উত্তর-পূর্বে আদ্রা কারাগারে আট মাস কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, সবাইকে আটক করা হয়।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় আনুমানিক দেড় লাখ মানুষ আটক বা নিখোঁজ হয়েছে এবং তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষকে সায়দনায়ায় আটক রাখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।