বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে লবণের উপস্থিতি বেশি। এই অবস্থায় কৃষকরা সীমিত সংখ্যক ফসলই চাষ করতে পারেন। তবে, বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি নতুন ফসলের চাষ শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়ানো এবং লবণাক্ততা কমানো সম্ভব হচ্ছে। এই ফসলটি হচ্ছে কেনাফ, যা পাটজাতীয় একটি ফসল।
কেনাফ (Hibiscus cannabinus) হলো মালভেসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ, যার আদি নিবাস আফ্রিকা। এটি পাটের মতোই অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বরিশাল কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে স্বাভাবিকভাবেই লবণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কৃষকদের জন্য কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে খরিফ-১ মৌসুমে অনেক কৃষক চাষাবাদ করেন না, কারণ লবণের আধিক্যের কারণে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে, নতুন এই ফসল কেনাফ চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের মোট চাষ উপযোগী জমির ৩২ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত, যা প্রায় ২.৮৬ মিলিয়ন হেক্টর। এর মধ্যে ১.০৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি লবণাক্ত। বিশেষ করে বরিশালের পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, এবং পিরোজপুরে ব্যাপক লবণাক্ত জমি রয়েছে। নাহিদ বিন রফিক আরও জানান, লবণ সহিষ্ণু জাত ছাড়া অন্য কোনো ফসল এসব জমিতে চাষ করা কঠিন, তবে কেনাফ চাষে এটি সম্ভব।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি প্রথমবার ২০ শতাংশ লবণাক্ত জমিতে কেনাফ চাষ করেছেন এবং আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। এপ্রিলে রোপিত ফসল থেকে তিনি শতাংশ প্রতি ১২ কেজি আঁশ পেয়েছেন এবং বর্তমানে সেপ্টেম্বর মাসে রোপিত বীজের ফসল থেকে প্রায় তিন কেজি বীজ পাওয়ার আশা করছেন।
পটুয়াখালীর পাট গবেষণা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আফলাতুন কবির হিমেল জানান, এবছর প্রথমবারের মতো উপকেন্দ্রের ১২ কৃষকের মধ্যে ৮ জনকে আঁশ এবং ৪ জনকে বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাতের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ হেক্টর পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদী।
বিজেআরআইর মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার জানান, কেনাফ চাষের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি শুধু জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে না, বরং শস্য নিবিড়তা বাড়াতে এবং কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে, কেনাফের পাতা উন্নতমানের গো-খাদ্য এবং এর আঁশ রপ্তানি যোগ্য। এর দ্রুত বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু গুণের কারণে, কেনাফ চাষ বিভিন্ন অনুর্বর এবং লবণাক্ত জমিতে ভালো ফলন দিতে সক্ষম।
সামগ্রিকভাবে, কেনাফ চাষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এটি উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে, এবং দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।