শনিবার, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
Barishal Zila School
Barishal Zila School

অভিভাবকহীন বরিশাল জিলা স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে বরিশাল জিলা স্কুল। দীর্ঘদিন এই স্কুলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে স্কুলটির যাবতীয় কার্যক্রম। যার কারণে বিভাগীয় শহরের ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নূরুল ইসলামকে (যিনি সরাসরি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত) ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াত অপবাদ দিয়ে ঝালকাঠিতে বদলি করা হয়েছে। বিগত সরকারের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লস্কর নূরুল হকের স্ত্রী পাপিয়া জেসমিনকে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকক হিসেবে আনার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাপিয়া জেসমিনঅবসরে যাওয়ার পর বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে স্কুলটির যাবতীয় কার্যক্রম।

মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন শিক্ষা সচিব মাদারীপুর থেকে বরিশাল জিলা স্কুলে পদায়ন করেন। তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে যোগদান করেই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সংস্কার শুরু করেন। বিদ্যালয়ের বেসরকারি আদায়ের (সেশন চার্জ) অপচয় রোধ করে সর্বোত্তম তদারকির মাধ্যমে দৃশ্যমান বেশ কিছু উন্নয়ন সাধন করেন। সেশন চার্জের টাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হলো- ২২০টি চেয়ার ক্রয়, স্কুল মাঠে স্টেজ নির্মাণ, শিক্ষকদের জন্য কনফারেন্স টেবিল তৈরি করা, নারী শিক্ষকদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম, শ্রেণি কক্ষে লাইট লাগানো, প্রধান- শিক্ষকের কক্ষের ফার্নিচার ক্রয়, পাঠাগারের জন্য শোকেস, ক্রীড়া সামগ্রী ও সংরক্ষণের জন্য শেলফ, বাদক দলের সামগ্রী, আধুনিক হলরুম তৈরিসহ অনেক উন্নয়ন কাজ ছাত্রদের কাছ থেকে আদায়কৃত নির্ধারিত চার্জ হতে (সরকারি নয়) করা হয়েছে। যা ইতেপূর্বে চার্জের টাকায় অন্য কোন প্রধান শিক্ষক করেননি।

মুহাম্মদ নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারিত কিছু অপবাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, সবগুলো প্রচারই ছিলো অলিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিদ্যালয়ের টিফিন, ক্রীড়াসহ, অন্যান্য ক্রয়ের সাথে জড়িত শিক্ষক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি সবকিছু অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। বিদ্যালয়ের আদায় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তিনিই বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের যাবতীয় পাওনাদি আদায়ের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে পরিপত্রের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক ছাউনিতে অবস্থানরত কয়েকজন অভিভাক জানান, তাদের প্রিয় প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরিয়ে পাপিয়াকে আনা হয়েছিলো এবং পরিবর্তীত পরিস্থিতেতে তাকে ফিরে পাবার জন্য তারা অধীর অপেক্ষায় আছেন।
নবম-দশম শ্রেণির বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তাকে সরানোর জন্যই বিভিন্ন রটনা করে জামায়াত-বিএনপি তকমা দিয়ে তৎকালীন শিক্ষা উপ- মন্ত্রী নওয়েলকে ব্যবহার করে বদলি করা হয়েছে। তার সময়ে মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটির সাথে
যোগাযোগ করলে তারা জানান, তিনি কোনো ভুয়া বা বাড়তি বিল- ভাউচার প্রদান করেননি। যে পরিমাণ টাকার মালামল ক্রয় করেছেন ওই পরিমাণ টাকারই ক্রোস চেক প্রদান করেছেন।

বিদ্যালয়ের কর্মরত বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করলে জানা যায় যে, তাদের দৃষ্টিতে তিনি অত্যন্ত সৎ ও যোগ্য শিক্ষক। তারা বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থে উন্নয়ন করা যায় তা তিনিই দেখিয়েছেন এবং ইতোপূর্বেও সেশন চার্জ নেয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু দৃশ্যমান কোনো
উন্নয়ন করা হয়নি। তার সততার কারণে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তবে তারাই বাজে মন্তব্য করতে পারেন বলে শিক্ষকদের মন্তব্য। তারা বলেন, আধুনিক বরিশাল জিলা স্কুল গড়ার তিনিই রূপকার, এখানে আবার তাকেই দরকার। তার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাকে সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের ফোনে বদলি করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান।

মুহাম্মদ নুরুল ইসলামের পূর্ব কর্মস্থল বরগুনায় যোগাযোগ করা হলে, কর্মরত বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, তার সময়েই বরগুনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আধুনিকতার স্পর্শ লাভ করে। তারা বলেন, প্রায় সাড়ে ৬ বছর কর্মরত থাকার পরে বরগুনার এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভুও রাজনৈতিক কারণে তাকে হয়রানিমূলক বদলি করেন।

বরগুনার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম অত্যন্ত ভালো প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো
অভিযোগও ছিল না। তার বর্তমান কর্মস্থল ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকদের কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তাদের দেখা একজন সেরা প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ননুরুল ইসলাম। তিনি সবসময় বিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশ ও পড়াশুনার কথা ভাবেন এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাকে সরিয়ে পাপিয়া জেসমনিকে
আনার মিশন বাস্তবায়নে যা করা দরকার সবই করে তাকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার সময়ে বরিশাল জিলা স্কুলেরন কোনো সম্পদ অপব্যবহার করতে তিনি দেননি। তার সময়ে কোনো সম্পদ চুরি যাতে না হয়, সে বিষয়েও তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তার কঠোর পদক্ষেপের কারণেই হয়তো ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

বরিশাল স্কুলের একটি সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে বদলি করার পর প্রায় ৪০০ কেজি ওজনের লোহার গেট, জিএফসি স্ট্যান্ড ফ্যান, প্রধান শিক্ষকের বাস ভবনের সিসি ক্যামেরাসহ বহু মালামাল চুরি হয়েছে। এসব কর্মকা-ের সাথে তিনজন সরকারি কর্মচারী যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক কর্মচারীদের দাবি, বরিশাল জিলা স্কুলের পড়াশুনার ও সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য স্কুল বান্ধব প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে দ্রুত বরিশাল জিলা স্কুলে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া
হোক।

আরো পড়ুন

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা বরিশাল বারের দায়িত্বে, উপদেষ্টা পরিষদ গঠন

বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥ বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরি পরিষদের দায়িত্ব এবার নিয়েছেন গত নির্বাচনে পরাজিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *