বুধবার, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
Port Rod Bazar
Port Rod Bazar

বরিশাল পোর্টরোড বাজার ইজারা নিয়ে সড়ক থেকেও চাঁদা আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে বরিশালের পোর্ট রোড বাজার ও ঘাট ইজারা নিলেও আশপাশের আধা কিলোমিটার পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর সড়ক থেকে চাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন তিন শতাধিক দোকানির কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয় বছর শেষে যা গিয়ে দাঁড়ায় অর্ধকোটির ঘরে। পুরো টাকাই ভাগবাটোয়ারা হয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মধ্যে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজারের একক নিয়ন্ত্রণে ছিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। ২০২৩ সালে সিটি নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহকে হটিয়ে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) মেয়র নির্বাচিত হলে আধিপত্য যায় খায়ের আব্দুল্লাহর অনুসারী মৎস্যজীবী লীগ নেতা খান হাবিবের হাতে। তিনি ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত তার স্ত্রীর নামে বাজারের ইজারা নেন। বাজার দখলে নিলেও বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন আশপাশের আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন তারা। তবে জুলাই বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতন হলে শ্রমিক লীগ খান হাবিব পালিয়ে যান।

তার স্থলে হাল ধরেন খান হাবিবের আপন ভাই শ্রমিক দল নেতা খান কামাল। দত্ত বাণিজ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী গণেশ দত্ত বলেন, পোর্ট রোড ব্রিজ থেকে লঞ্চঘাট চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে অসংখ্য ভাসমান দোকান বসিয়েছে। রাস্তার দুইপাশে ভাসমান এসব দোকান বসানোয় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ইজারাদার বাজারের ইজারা এনেছেন নাকি সরকারি রাস্তার ইজারা এনেছেন তা আমরা বলতে পারবো না। তবে যে বাজারটি আছে তার বাইরে মূল রাস্তার দুইপাশে আমরা ৩০০ ব্যবসায়ী আছি ডালা বসিয়ে। প্রতিদিন ইজারাদারের প্রতিনিধি এসে আমাদের কাছ থেকে ৫০
টাকা করে চাঁদা নেন।

আরেকজন বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেও প্রতিদিন চাঁদা দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি। আগে আওয়ামী লীগের টুটুল, খান হাবিব কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। এই রাস্তা দিয়ে ট্রাক ঢুকলেই টাকা দিতে হয়। ছোট গাড়ির কাছ থেকেও চাঁদা তোলা হয়। আমরা কিছু বললে ব্যবসা করতে দেবে না। এজন্য চাঁদা দিলেও কিছু বলতে পারি না।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতা খান হাবিব আত্মগোপনে থাকলেও তার অনুসারীরা এখনো বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন সড়কে থাকা ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ইজারা স্লিপ দিয়ে চাঁদা তুলছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি ভাসমান ব্যবসায়ীরা স্বীকার করলেও ইজারাদারের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ইজারার আওতায় বাজারের অংশে কোনো ব্যবসায়ী দোকান বসালে তাদের কাছ থেকে ইজারা ফি তুলি। আগে ৫০ টাকা হয়তো নেওয়া হতো। এখন আমরা ২০/৩০ টাকা উঠাই। সড়কে অবৈধভাবে ফল, সবজির যে দোকান বসায় তাদের কাছ থেকে আমরা কিছুই নেইনা।

তিনি জানান, পোর্ট রোড বাজার সিটি করপোরেশন থেকে ৩০ লাখ টাকায় আমাদের ইজারা নেওয়া। সড়কে যেসব অবৈধ দোকান বসে তা উচ্ছেদের জন্য বলে থাকি কিন্তু ভাসমান দোকানিরা আমাদের কথা শোনেন না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পোর্ট রোড ঘাটও ২ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া আমাদের। ইজারার আওতায় আছে পোর্ট রোড ব্রিজ থেকে ফলপট্টির মুখ পর্যন্ত।

পোর্ট রোড ব্রিজ থেকে ফলপট্টির মুখ পর্যন্ত ইজারার কথা দাবি করা হলেও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নদী থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য পোর্ট রোডটি বিআইডব্লিউটিএ নির্মাণ করেন। এই রোডটি বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন। রোডটি আমরা কারো কাছে ইজারা দেইনি। সম্প্রতি জেনেছি, কিছু লোক পোর্ট রোডে দোকান বসিয়েছে। সেগুলো উচ্ছেদে আমরা শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করবো। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, পোর্ট রোডটি বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন। ওই রোডটি বাদ দিয়ে বাজার আমরা ইজারা দিয়েছি। রাস্তায় কেউ দোকান বসাবে তার অনুমতি সিটি করপোরেশন দেয়নি।

অবৈধ এসব দোকান আমরা অনেকবার অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছি। দেখা গেছে যেদিন অভিযান চালিয়েছি, তার পরের দিন পুনরায় দোকান বসিয়ে সড়ক দখল করে নেয়। সিটি করপোরেশনের ইজারাদার তার নির্ধারিত এলাকা থেকে খাজনা তুলতে পারবে কিন্তু বাজারের বাইরে অন্য কারো মালিকানাধীন জমিতে গিয়ে খাজনা তুলতে পারবে না। এমন যদি কেউ করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ
করবো।

আরো পড়ুন

gournadi

তারুন্যের উৎসব উপলক্ষে টরকী গালর্স স্কুলে লোকজ ও বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত

গৌরনদী প্রতিনিধি‍॥ তারুন্যের উৎসব ২০২৫ উপলক্ষে গৌরনদী উপজেলার টরকী গার্লস স্কুলের উদ্যোগে মঙ্গলবার দিনব্যাপি বিদ্যালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *