শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫

কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার এর জন্ম বার্ষিকী আজ

মুন্সী এনাম
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। প্রথমে কুষ্টিয়ায় মুহাম্মদ ওসমান, পরে কলকাতায় মোকসেদ আলী শাই, লুৎফেল হক এবং শিবকুমার চ্যাটার্জির কাছ থেকে সঙ্গীতের তালিম নেন । ১৯৫৮ সালে, গীতিকার আজিজুর রহমান আবদুল জব্বারকে রেডিও স্টেশনের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে সাহায্য করেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু হলেও চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী।
জহির রায়হান পরিচালিত “সংগম” ছবির গানে কণ্ঠ দেন ১৯৬৪ সালে । ১৯৬৮ সালে “এতটুকু আশা” ছবিতে সত্য সাহার সুরে তাঁর গাওয়া “তুমি কি দেখেছ কভু” গানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেই বছর “পীচ ঢালা পথ” ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে “পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি” ও “ঢেউয়ের পর ঢেউ”ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে “সুচরিতা যেওনাকো, আর কিছুক্ষণ থাকো” এ দুটি গান তাঁকে এনে দেয় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।
“সারেং বৌ” ছবিতে আলম খানের সুরে তাঁর গাওয়া “ও রে নীল দরিয়া” গানটিও ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায় ১৯৭৮ সালে । ২০১৭ প্রকাশিত হয় “কোথায় আমার নীল দরিয়া” শিরোনামে তাঁর প্রথম মৌলিক অ্যালবাম।

স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত “সালাম সালাম হাজার সালাম” সহ অনেক দেশাত্মবোধক গানের গায়ক হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন । তাঁর গাওয়া “তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়”, “সালাম সালাম হাজার সালাম” এবং “জয় বাংলা বাংলার জয়” গান তিনটি ২০০৬ সালের মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার আয়োজনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা ২০ গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের সময় ভারতীয় কণ্ঠশিল্পীদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন আব্দুল জব্বার।

বরেণ্য এ শিল্পী অনেক ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো: সংগম (১৯৬৪), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), উলঝন (১৯৬৭), পীচ ঢালা পথ (১৯৬৮), এতটুকু আশা (১৯৬৮), ঢেউয়ের পর ঢেউ (১৯৬৮), ভানুমতি (১৯৬৯), ক খ গ ঘ ঙ (১৯৭০), দীপ নেভে নাই (১৯৭০), বিনিময়, (১৯৭০), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), নাচের পুতুল (১৯৭১), মানুষের মন (১৯৭২), স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা (১৯৭৩), ঝড়ের পাখি (১৯৭৩), আলোর মিছিল (১৯৭৪), সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬), তুফান (১৯৭৮), অঙ্গার (১৯৭৮), সারেং বৌ (১৯৭৮), সখী তুমি কার (১৯৮০) ও কলমিলতা (১৯৮১)।
কণ্ঠকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। এরমধ্যে রয়েছে একুশে পদক (১৯৮০), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-আজীবন সম্মাননা (২০১১) ও জহির রায়হান চলচিত্র পুরস্কার।

ব্যক্তিজীবনে তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আবদুল জব্বার। তার প্রথম স্ত্রী হালিমা জব্বার একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের দুই ছেলে মিথুন জব্বার ও বাবু জব্বার এবং মেয়ে মুনমুন জব্বার। দ্বিতীয় স্ত্রী শাহীন জব্বার ছিলেন গীতিকার এবং তৃতীয় স্ত্রী ডলি জব্বার ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের একজন কর্মকর্তা। তাদের সন্তান মিথুন জব্বারও একজন সঙ্গীতশিল্পী।
বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

মুন্সী এনাম
পরিচালক
শিহরণ অ্যাকাডেমি, রুপাতলী, বরিশাল।
01711062436.

আরো পড়ুন

agoiljhara

আগৈলঝাড়ায় তারুণ্যের পিঠা উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় তারুণ্যের পিঠা উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *