শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫

‍ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই ফাল্গুনের বাৎসরিক মাহফিল শুরু

বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥ চরমোনাই পীর আলহাজ হজরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয় বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই মাহফিল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সুতরাং এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাদ জোহর বরিশালের চরমোনাইয়ে তিন দিনব্যাপী ফাল্গুনের মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় চরমোনাই পীরের আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনব্যাপী এ মাহফিল।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখিরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে যায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলী হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।

জানা গেছে, চরমোনাই মাদ্রাসার মূল মাঠসহ মোট ৫টি মাঠে এবারের ফাল্গুনের মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মাহফিলে আগত মুসল্লীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এ হাসপাতালের উদ্বোধন করেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। হাসপাতালে ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরও ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হচ্ছে।

মাহফিল হাসপাতাল কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স ও ২টি নৌ অ্যাম্বুলেন্স। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া মুসল্লিদের তাৎক্ষণিক মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছেন বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৫টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল টিম। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বা বস্তু খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মাঠেই রয়েছে ক্যাম্প। যে কিছু কুড়িয়ে পেলে এখানে জমা দিয়ে দেন আবার কেউ কিছু হারিয়ে ফেললে এখান থেকে খুঁজে নেন।

সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের খাবারের জন্য সকল মাঠের চারদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, ওজু এবং গোসলের ব্যবস্থাপনা। তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের প্রথমদিন বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন সারাদেশ থেকে আগত ওলামায়ে কিরামদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষদিন সকালে সারা দেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মাহফিলে আগত যুবক, শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজন করে বিশেষ মতবিনিময় সভা।

উল্লেখ্য, চরমোনাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ ঈসায়ী সালে। চরমোনাই মাহফিল ও দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ এছহাক (রহ.)। তার ইন্তেকালের পর ১৭৭৭ সাল থেকে এ দরবারের জিম্মাদারি পালন করেন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)। ২০০৬ সালে তার ইন্তেকালের পর এখন পর্যন্ত আমীরুল মুজাহিদীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলহাজ হজরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির।

আরো পড়ুন

শেবামেকে কমপ্লিট শাটডাউনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবামেক) শিক্ষার্থীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির তৃতীয় দিন আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *