বিশেষ প্রতিবেদক
বরিশাল মহানগরীর মধ্যভাগ দিয়ে চলে যাওয়া দেশের ৮নম্বর জাতীয় মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে নির্মিত সিটি করপোরেশনের একটি দ্বিতল অবকাঠামো এখন পরিপূর্ণ মরণফাঁদ হয়ে দাড়িয়ে আছে। অথচ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিষ্ঠানটির নগরীতে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মানে তদারকিসহ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু নগর ভবন নিজেই সেক্ষেত্রে অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিয়ে নগরবাসীর জন্য চরম বিড়ম্বনা তৈরি করেছে। নগর ভবনের নিকট অতীতের সেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে নগরীর অনেক এলাকায় যেমনি নাগরিক সুবিধা বিপর্যস্ত, তেমনি একটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে ভয়াবহ মরন ফাঁদ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বর্তমান নগর প্রশাসনও তেমন কিছু করতে পারছেন না আইনগত জলিতাসহ আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার কারণে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনর ৪র্থ নগর পরিষদের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরির সিএন্ডবি রোডে জাতীয় মহাসড়কের জমি দখল করে তার প্রয়াত মায়ের নামে ‘শাহানারা আবদুল্লাহ পার্ক’ নির্মাণের পাশাপাশি তার দক্ষিণ পাশে সড়ক অধিদপ্তরেরই জমি দখল করে একটি দ্বিতল ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ করেন। এসব কাজে ঠিাকারকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি ভবনটির দোতালার ছাদ ঢালাই দিয়ে অসমাপ্ত অবস্থায়ই ফেলে রাখে প্রায় ৩ বছর। তবে সাবেক মেয়র ওই অবস্থাতেই ভবনটি দলীয় এক নেত্রীকে ইজারাও প্রদান করেন।
এ অবস্থাতেই সাদিক জামানার অবসানের পরে তার আপন চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ৫ম নগর পরিষদের মেয়র হিসেবে নগরীর চাবী গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি তার সাড়ে ৯ মাসের কর্মকালে সাবেক মেয়রের অবৈধভাবে নির্মিত পার্ক ও ভবনটির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে দেশের অন্যসব সিটি করপোরেশনের মত বরিশাল নগর পরিষদেরও বিলুপ্তি ঘটে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার নগর প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু এরপরে ৭ মাস কেটে গেলেও জাতীয় মহাসড়কের জমি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ পার্ক ও তারই পাশের ভবনটির ব্যাপারে নগর পরিষদ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন নি।
ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতা দুদফায় অবৈধ পার্কটিতে ভাঙচুর করেছে। সম্প্রতি ঢাকার ৩২ নম্বরের সাথে শাহনারা বেগম পার্কের পাশাপাশি অবৈধ ভবনটির অবকাঠামোও ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। এ ভাংচুরে সিটি করপোরেশনেরই বুলডোজার ও এ্যক্সেবেটর ব্যবহার করা হলেও এখন এসব অবৈধ অবকাঠঅমোর দায় দায়িত্ব নগর ভবনের কেউ গ্রহণ করছেন না। এমনকি পুরো পার্কটি অনেকটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবার পাশাপাশি দ্বিতল ভবনের অবকাঠামো জাতীয় মহাসড়কটির পাশে মরনফাঁদ হয়ে দাড়িয়ে আছে। যেকোন সময় ক্ষতবিক্ষত ওই দ্বিতল ভবনের অবকাঠামো মহাসড়কটির ওপর ভেঙে পড়তে পারে বলেও মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাস্তুকারগন।
তবে এব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওসারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, এসব অবকাঠামো নির্মাণের কোন বৈধতা ছিল না। বিপুল অর্থ ব্যয়ে এসব অবকাঠামো নির্মিত হলেও তা নগরবাসীর কোন উপকারে আসেনি। এখন পার্ক ও ভবনটির অবকাঠমো অপসারণেও বিপুল অর্থের প্রয়েজন। কিন্তু সে তহবিল কোথা থেকে আসবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উপরন্তু এসব অবৈধ স্থাপনার পেছনে আরো অর্থ ব্যয়ের বৈধতা কে দেবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ইতোমধ্যে সড়ক অধিদপ্তর থেকে জাতীয় মহাসড়ক থেকে এসব অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিতেও নগর ভবনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি সবকিছু নিয়ে নিতে। কিন্তু তাদেরও তো তহবিলের প্রয়োজন হবে। সবমিলিয়ে একটি অচলবস্থার কথা স্বীকার করে নগর প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলেই জানিয়েছেন। কিন্তু কতদিনে এসব অবৈধ অবকাঠামো অপসারণ করে জনগনের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জহবে, তা বলতে পারেন নি নগর প্রশাসক রায়হান কায়সার।
আরো পড়ুন
বরিশালে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। দিনরাত খেটেও সপ্তাহে একদিনের ছুটি পান না গৃহকর্মীরা। তাদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো …