এম জামান
দল গঠনের পর বরিশালে প্রথম সভাতেই দলের প্রধান নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান, গাড়ী আটকে অবরোধ করাসহ হাতাহাতি-মারামারির মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই চাপা ক্ষোভ, বিভক্তি দেখা দিলেও বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ্যে চলে আসে। বৃহস্পতিবার বরিশালের নেতাকর্মী, গণমাধ্যম ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে জাতীয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের মতবিনিময় সভা শেষে ব্যাপক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইফতার ও মতবিনিময় শেষে নাহিদ ইসলামকে অবরুদ্ধ করা হয় এবং দীর্ঘ সময় পথরোধ করে তাকে গাড়িতে উঠতে দেয়নি এক পক্ষ। এ সময় নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সংগঠক ইয়াসিন আরাফাতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। সভা শেষে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির পক্ষে-বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে উভয় গ্রুপ। রাত ১০টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পক্ষের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। অন্যদিকে রাত ১১টায় বরিশাল নগরের আমতলার মোড় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও জেলার নেতাকর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুলাইমা জান্নাত সিফা বলেন, এখানে ওপেন সিক্রেট হচ্ছে দুটি কোরাম হয়ে গেছে। আমরা যারা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলি তারা নাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাদের পাঁচ মিনিট সময়ও দিয়েছিলেন। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অন্য কোরাম আমাদের কথা বলতে দেয়নি এবং পরিস্থিতিটা ভিন্নখাতে নিয়ে যায়। তাদের একজন সংগঠক ইয়াসিন আরাফাত আমার গায়ে হাত দেয় এবং ওড়না ধরে টান দেয়, যা ডা. মাহমুদা মিতু আপু নিজেই দেখেছেন। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার সদস্য সচিব এসএম ওয়াহিদুর রহমান শান্ত বলেন, নাহিদ ইসলাম ভাই, ডা. মাহমুদা আলম মিতু ও ডা. তাসনিম জারা আপুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাবে আমাদেরসহ এনসিপির নেতারা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠান করেন তারা। যে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছাড়া বাইরের কারও অংশগ্রহণ করার কথা নয়। কিন্তু একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের কায়দায় ইফতার ও মতবিনিময় শেষে নাহিদ ইসলাম ভাইকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে এবং তাকে গাড়িতে উঠতে দেয়নি। এ সময় ওই পক্ষ নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ওইসময় নাহিদ ইসলাম ভাই ও আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সংগঠক ইয়াসিন আরাফাতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। তিনি বলেন, নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রসহ কেডিসি ও পলাশপুর বস্তির ছেলেদের নিয়ে এসে নাগরিক পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির নেতাদের ওপর হামলা চালায়। অন্যপক্ষের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র প্রতিনিধি লাবণ্য রহমান বলেন, নাহিদ ভাই পটুয়াখালী থেকে বরিশালে ইফতার মাহফিলে আসেন। এখানে তার ইচ্ছা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মীদের সঙ্গে পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও কথা বলতে চেয়েছিলেন। এখানে তৃতীয় পক্ষ যারা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কখনও চায়নি নাহিদ ভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলুক। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও জেলা কমিটিতে কিছু সদস্য আছে যাদের নিয়ে ন্যায়ের পক্ষের এ প্লাটফর্মে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অ্যালিগেশন আছে সেসব ঘটনার তদন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি করবে সে প্রত্যাশা যেমন রয়েছে, তেমনি অভিযোগগুলো প্রমাণ হলে তাদের এখান থেকে বাদও দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগরের সদস্য নাফিজ ইমাম বলেন, আমরা সদস্যরা কোথাও কোনো জায়গাতে পাত্তা পাই না। এরপর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমি শহিদুল ইসলাম শাহেদ ও ওয়াহিদুর রহমানের পদত্যাগের কথা বলেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুলাইমা জান্নাত সিফা বলেন, আমরা সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শাহেদ ও জেলার সদস্য সচিবের পদত্যাগ চেয়েছি, কারণ তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অনেক অ্যালিগেশন আছে। আমার গায়ে দেওয়ার ঘটনায় আমি বিচার চাই। আমরা ইয়াসিনের পদত্যাগ চাই, কারণ সে সংগঠনে থাকলে মেয়েরা আরও হ্যারেজ হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, যারা বরিশাল ক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করেছে তাদের আমি ছাত্রলীগ বলি না। তবে তারা কমিটি হওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের কায়দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশালের কমিটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তবে সেই অপচেষ্টাকে আমি বাঁধা প্রদান করায় আমার বিরুদ্ধে এবং আমার পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ওই পক্ষটি অবস্থান নিয়েছে। সে সঙ্গে তারা আমাদের অপসারণের দাবি তুলছেন। তিনি বলেন, আমাকে অপসারণের দাবি যৌক্তিক হলে সেটা যৌক্তিক পদ্ধতিতে কেন্দ্রে অভিযোগ দিলে, কেন্দ্র প্রমাণ সাপেক্ষে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু তারা তা না করে আজ এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভাইসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও অতিথিদের অবরুদ্ধ করে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের পদত্যাগ করাতে। সেই অপচেষ্টা কমিটির সক্রিয় সদস্যরা তাৎক্ষণিক রুখে দিয়ে তাদের সেখান থেকে বের করে আনে। তিনি বলেন, ওখানে আমাদের অনেককে অপমান-অপদস্থ করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে অ্যাসল্ট করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব এবং এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বরিশাল ক্লাবের ২য় তলায় ইফতার মাহফিল শেষে মতবিনিময় সভার শেষ মুহূর্তে দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে নাহিদ অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের সাথে নিচে নামেন। পূণরায় তিনি ক্লাবের ২য় তলায় উঠে কমিটির সদস্যদের সেখানে যেতে বলেন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই দোতলা থেকে নেমে নাহিদ ইসলাম গাড়িতে ওঠেন। এ সময় একপক্ষ বরিশাল ক্লাবের গেট আটকে দিলে অপর পক্ষের সাথে হাতাহাতি হয়। তখন কোতোয়ালি থানা পুলিশের সাদা পোশাকধারী সদস্যরা গেট খুলে ভেতরে ঢুকে নাহিদ ইসলামের গাড়ি বের করে নিয়ে আসেন। এ সময় কিছু ছাত্র গাড়ি বের হতে বাঁধা দিলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্লাব রোড পার হয়ে যায় নাহিদ ইসলামের গাড়ি। এরপর কিছু নেতা ডা. তাসনিম জারাকে ব্যারিকেড দিয়ে বরিশাল ক্লাব থেকে বাইরে নিয়ে যান। পরে ছাত্রদের একটি গ্রুপ অপর পক্ষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও পথ অবরুদ্ধ করে। সেখানেও চলে বাদানুবাদ এবং বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরূদ্ধে বিষোদগার করতে থাকে। সেখান থেকে রাত ১০টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করেন। অপরদিকে রাত ১১টায় নগরীর আমতলার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও জেলার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।
আরো পড়ুন
বরিশালে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। দিনরাত খেটেও সপ্তাহে একদিনের ছুটি পান না গৃহকর্মীরা। তাদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো …