শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

চালের দাম বৃদ্ধি: খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা  নেটওয়ার্ক- খানি। জনজীবনে নেমে আসা এই তীব্র সংকট নিরসনে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আজ ০১ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার সকাল ১০ টা বরিশাল অশ্মিনিকুমার টাউন হলের সামনে “ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও  নিয়ে প্রান্তজন ও খাদ্য নিরাপত্তা  নেটওয়ার্ক- খানি যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন এর আয়োজন করে। আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
মানবনন্ধনে বরিশাল ক্যাব এর সম্পাদক জনাব রনজিৎ দত্ত বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের জুন ২০২৫-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্তেও প্রত্যাশিত স্বস্তি আসেনি বাজারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, অবৈধ মজুতদারি এবং বাজার নজরদারির অভাবে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এর ফলে কৃষক তার ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অথচ ভোক্তাকে চড়া মূল্যে চাল কিনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল পরিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব জনাব সুভাষ দত্ত বলেন, “আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে পুষ্টিকর উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডাল বা সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাত-নির্ভর খাবার খাচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বক্তারা বলেন জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের আয় না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ২০২৪ সালের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, এখন প্রতি মাসে ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে একজন মানুষের ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ টাকা, যা খাদ্য দারিদ্রসীমার চেয়ে ৬৯.৫ শতাংশ বেশি।
চালের মূল্যসহ সার্বিক মুল্যস্ফীতির এই সংকটপূর্ণ অবস্থা নিরসনে খানি বাংলাদেশের মানববন্ধনে নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরা হয়:
১। কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতাবৃদ্ধি করতে হবে।
২। দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩। বাজার, উৎপাদন, মূল্য নির্ধারণ এবং ভোগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার সহায়তায় টিসিবি এবং ওএমএস কর্মসূচির আওতাবৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৫। যথাযথ মনিটরিং এবং সিন্ডিকেট এর অপতৎপরতা রোধ করার মাধ্যমে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চালের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আনতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জরুরি ভিত্তিতে এই দাবিগুলো বিবেচনা করে দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। বরিশালের স্থানীয় জনগণ এবং পরিবেশ সচেতন মানুষ, যুব প্রতিনিধি, শুশিল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, পরিবেশ কর্মী সহ অনেকে আজকের এই যুব সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *