নিয়ামুর রশিদ শিহাব
কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। ২০২৪ সালের এই দিনে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখনও তারা ৪ দফা দাবিতে অনড় ছিল। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এই দিনও ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সমবেত হয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এরপর মিছিল নিয়ে দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা দিনব্যাপী স্লোগান কবিতা আবৃত্তি, প্রতিবাদী ও দেশাত্মবোধক গান গেয়ে কোটার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছিল। বিকাল ৫টার দিকে অবরোধ চলাকালীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যের বাকবিতান্ড হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে অবস্থানরত পুলিশের দিকে তেড়ে যায়। তবে আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন গিয়ে তাদের শান্ত করে ছিল। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া-ভুয়া স্লোগান দেন
সেখানে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এরপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন।
এদিকে একই দিন দুপুর ১২টায় ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিল শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে সাইন্সল্যাব মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। পরে মিরপুর সড়ক হয়ে নীলক্ষেত মোড় ঘুরে কলেজের মূল ফটকে মিছিল শেষ করেছিল। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তারা রায়সাহেব মোড়সহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কোটা বাতিলের দাবি জানান।
একই দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা বই পুড়িয়ে ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। এ কারণে মহাসড়কের চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যাত্রীবাহী বাসসহ সহস্রাধিক যানবাহন আটকে পড়েছিল। বিকালে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরাতে ঘটনাস্থলে যান ববির তৎসময়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অনড় থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে অবরোধ ভাঙার টার্গেটে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের এক নেতা মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিল। এ সময় তাকে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ৩০/৪০ জনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে চড়-ঘুসি দেয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ হামলায় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক সহ তিন জন আহত হয়েছিল।
সরকারি চাকরিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেছিল শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা। এতে সড়কের উভয় লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রায় ৩ ঘণ্টা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বৃষ্টি উপেক্ষা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নগরীর জিরো পয়েন্ট অবরোধ করেছিল। এতে খুলনা-ঢাকা, খুলনা-যশোর, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের প্রবেশ মুখ বন্ধ হয়ে যায়। জিরো পয়েন্টের চতুর্দিকের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দিনভর উত্তাল ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আগের দিনের মতো ট্রেন অবরোধ করে আন্দোলন করেছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আব্দুল জব্বার মোড়ে রেলপথ অবরোধ করেছিল। এদিকে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।