নিজস্ব প্রতিবেদক
সাদা মাছির আক্রমণে বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক কোটি নারকেল গাছের ফলনে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত এক বছর ধরে বরিশাল অঞ্চলে নারকেল ছাড়াও পেয়ারা ও অন্যান্য মৌসুমি ফলের গাছে সাদা মাছির আক্রমণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। তবে নারকেল গাছেই এর আক্রমণ তুলনামূলকভাবে বেশি ও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব মাছি গাছের পাতার নিচে অবস্থান করে রস শুষে নেয়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে ও ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গাছের উচ্চতায় পাতার নিচে এই আক্রমণ হওয়ায় সাধারণ স্প্রে মেশিন দিয়ে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র ফুট-স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ করলেই এসব মাছি দমন সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ কৃষকের কাছে সেই ধরনের স্প্রে মেশিন না থাকায় গাছ রক্ষা করা দুরুহ হয়ে পড়েছে।
ফলে নারকেলের উৎপাদন ক্রমশ তলানিতে নেমে এসেছে। এর ফলে ডাব ও নারকেলের দামও আকাশছোঁয়া। বরিশালের বাজারে ছোট একটি ডাবের দাম বর্তমানে ১০০ টাকার ওপরে, আর ছোট নারকেলের জোড়া বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকায়। এতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যক পানীয় ডাব অনেকের জন্য ‘কল্পনাবিলাসে’ পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, সম্প্রতি নারকেলসহ বিভিন্ন ফলের গাছে সাদা মাছির আক্রমণ বেড়েছে।
আমরা আক্রান্ত এলাকা শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। ফুট-পাম্পের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে করে পোকা দমন ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাছি পোকার আক্রমণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে তেলজাতীয় ফল উৎপাদনেও বড় সংকট দেখা দিয়েছে। নারকেল নির্ভর শতাধিক ক্ষুদ্র ও কুটির তেলকল বন্ধের পথে। এসব তেলকলের অনেকগুলো এসএমইসহ ব্যাংক ঋণে পরিচালিত, ফলে উদ্যোক্তারা এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
বৈজ্ঞানিক নাম Cocos nucifera—বাংলাদেশে পরিচিত নারকেল নামে। এটি পামি পরিবারের চিরসবুজ বৃক্ষ, যা ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয় এবং উপকূলীয় অঞ্চল থেকে পাহাড়ি ঢালে পর্যন্ত ভালোভাবে জন্মে। নারকেল শাঁসে তেল ও স্নেহ পদার্থসমৃদ্ধ, আর ডাবের পানিতে খনিজ পদার্থে ভরপুর। চিকিৎসকরা একে প্রাকৃতিক স্যালাইন হিসেবে বিবেচনা করেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর তথ্যমতে, দেশে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টন ডাব উৎপাদিত হয়, যার বড় অংশ বরিশাল ও পার্শ্ববর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে।
বারি উদ্ভাবিত ‘বারি নারিকেল-১’ এবং ‘বারি নারিকেল-২’ জাত দুটি উচ্চ ফলনশীল ও সারাবছর ফলন দেয়। একটি পরিপক্ব গাছে বছরে ৬৫–৭৫টি নারকেল ধরে, যার পরিপক্ব শাঁসে তেলের পরিমাণ প্রায় ৫৫–৬০ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আক্রমণ ও উৎপাদন হ্রাসের কারণে বরিশাল অঞ্চলের নারকেল শিল্প ও তেলকলগুলো বিপর্যয়ের মুখে।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।