শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥

হেমন্তের শেষের দিকে সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সবচেয়ে কম। শীতকাল শুরু আগেই হিমালয়–কন্যাখ্যাত উত্তরের এই জনপদে বইতে শুরু করেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে সকালে ঝলমলে রোদের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি আছে জনজীবনে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন বেলা ৩টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ওই দিন সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়।

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, কোনো এলাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সে হিসাবে তেঁতুলিয়ায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে দুই হাজার কম্বল ও শীতবস্ত্র কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার কম্বল জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করেছে।

আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিক ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে। কেউ সবজিখেতে সংগ্রহ করছেন সবজি, কেউবা তা ভ্যানে করে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। আবার কেউ কৃষিজমিতে হালচাষ করার পাশাপাশি বপণ করছেন নানা শাকসবজির বীজ। এরই মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পূর্ব আকাশে উঁকি দিতে থাকে সূর্য। ধীরে ধীরে উঠতে থাকে ঝলমলে রোদ। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে থাকায় দিনের বেলাও অনুভূত হচ্ছে শীত।

আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার তুলার ডাঙ্গা এলাকায় বাজারে বিক্রির জন্য খেত থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করছিলেন কৃষক শামিরুল ইসলাম (৩৬)। তিনি বলেন, ‘সকালে যেলা (যখন) খেতোত কপি কাটিবা আসি, সেলা (তখন) কুয়াশায় কিচ্ছু দেখা যায় না। এই বছরের মইধ্যে আজি সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা। ঠান্ডাতে মনে হচে হাত-পাও কাটা যায় পালাছে।’

পাশের জমিতে গরুর হাল দিয়ে চাষ করছিলেন ফয়জুল ইসলাম (৫৮) নামের এক কৃষক। তিনি বলেন, ‘হালাখান বহেচু তে মনে হচে পাও লা খালি ঠান্ডাতে পটপটাছে। আইজ এতো ঠান্ডা বাতাস। মাটিখানও ঠান্ডা হয়ে গেইছে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয়েছে। এই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে সকাল সকাল কুয়াশা কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকবে।

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমে প্রথম বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের প্রথম আজ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। মেঘমুক্ত দিনে উত্তরের হিমশীতল হওয়ায় হাড়কাঁপুনি শীত অনুভূত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৮৮ শতাংশ। এর আগে ৪ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটির পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আজ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত শীত মৌসুমে ১২ জানুয়ারি জেলার ওপর দিয়ে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই দিন জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই মাসের ২৩ জানুয়ারি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবেড্ডা শীত এট্টু বেশিই লাগজে। তাই বেশিক্ষণ গাড়ি চালাইনো যাচ্চে না। প্যাসেন্দারও সেরাম পাওয়া যাচ্চে না। বারোমাসির মদ্দি শীতকালই বেশি কষ্ট কত্তি হয়।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চুয়াডাঙ্গার শীতার্ত মানুষের জন্য গতকাল ১০ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আজ এসব কম্বল বিতরণ করা হবে।

আরো পড়ুন

pintu bnp

১৭ বছর পর মুক্তি পেলেন পিন্টু

বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *