বাংলাদেশ বাণী ডেস্ক॥
মধ্যরাতে মাঝনদীতে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল দুই যাত্রীবাহী চলন্ত লঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে লঞ্চ দুটির সম্মুখভাগের বিভিন্ন অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো যাত্রী হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চের মধ্যে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে সক্ষম হলেও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ নামে অপর লঞ্চটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে রাতভর নোঙর করে রাখা হয়।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বিআইডব্লিউটিএ, বরিশালের উপ-পরিচালক ও নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, নৌ-দুর্ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা নেই। আর সকালে দুর্ঘটনাকবলিত এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের যাত্রীদের এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চের মাধ্যমে বরিশালে নিয়ে আসা হচ্ছে।
অপরদিকে সকাল ১০টায় ঢাকা সদরঘাট দপ্তরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে সকালে ঢাকায় পৌঁছেছে। দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা দেরিতে লঞ্চটি ঢাকায় পৌঁছে।
এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের ৫৮০ জন যাত্রীকে বিকল্প ব্যবস্থায় নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, রাত সোয়া ২টা থেকে আড়াইটার দিকে তাদের বহনকারী লঞ্চটি মেঘনা নদী দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর ওই সময় নদীতে এত ঘন কুয়াশা ছিল যে, একহাত সামনেও দেখা যাচ্ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এর মাঝেই হঠাৎ বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের সঙ্গে আমাদের বহনকারী এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের বিকট শব্দে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় লঞ্চের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে লঞ্চের চালক কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চকে তাৎক্ষণিক নদী তীরে নিয়ে ভাসিয়ে রাখে।
মনির হোসেন বলেন, সংঘর্ষে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের শুধু সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, লঞ্চটির সামনে রাখা যাত্রীদের ২০টির বেশি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো যাত্রী হতাহতের খবর পাইনি। পরে সবকিছু চেক করে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ আবার ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
এদিকে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের যাত্রী মেহেদি হাসান বলেন, বিকট শব্দ আর লঞ্চ দুলে ওঠার আতঙ্কে ঘুম থেকে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে দেখি ঘন কুয়াশা। একহাত সামনেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরে লঞ্চের সামনের অংশে গিয়ে দেখি কীর্তনখোলা-১০ নামে অন্য একটি লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যান্টারের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আওলাদ-১০ লঞ্চের চালক সেটিকে চরে তুলে দেয়। শুনেছি নিচের একটি অংশ থেকে পানিও লঞ্চের ভেতরে প্রবেশ করছিল। তাই ঝুঁকি এড়াতে লঞ্চটি আর চালনা করা হয়নি। সকাল ৯টার দিকে এমভি শুভরাজ-৯ নামে একটি লঞ্চ ঘটনাস্থল থেকে আমাকেসহ যাত্রীদের উদ্ধার করে বরিশালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত সব যাত্রীই নিরাপদে লঞ্চে অবস্থান করছিল। তবে সবার মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
যদিও ফগ লাইট, রাডার, ইকো সাউন্ডার, ভিএইচএফসহ আধুনিক নৌ সরঞ্জাম দুটি লঞ্চে থাকার পরও সংঘর্ষ ঘটায় যাত্রীরা অনেকটাই হতবাক। ঘটনার সময় যন্ত্রপাতিগুলো সচল ছিল কিনা, কিংবা এগুলো চালানো হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে হাজার যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় দায়িত্ব অবহেলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিল সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক। তবে উভয় লঞ্চ মিলিয়ে ১২শ’ এর বেশি যাত্রী ছিল বলে দাবি যাত্রীদের।