এইচ এম আনিছুর রহমান, মেহেন্দিগঞ্জ: বরিশালের হিজলা উপজেলার শতবর্ষী হিজলা পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম ও পাঠদান। ভবনের জরাজীর্ণ দশায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন আছে আতঙ্কে তেমনি শিক্ষক ও অভিভাবকরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। এমন চিত্র রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে সরেজমিন এই ভয়াবহতা দেখা যায়।
উপজেলার অন্যতম সেরা এই বিদ্যালয়টির উঠে গেছে দেয়ালের রং, খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়ালে, ছাদ, পিলার ও বিমে। পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেড়িয়ে গেছে। একটু খানী বৃষ্টি হলেই ছাদ ছুঁইয়ে পানি পড়ে বই খাতা ভিজে নস্ট হয়ে যায়। এতে করে ৪০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা। অন্ধকারাচ্ছন্ন শ্রেণি কক্ষ, নেই বিদ্যুৎ। এর চেয়ে হাজত খানা যেনো আরো ভালো। ১৯১৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ১তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হয়। ২০০৫ সালে দ্বিতল ভবন নির্মান হলেও ২০১৭ সালে নদীতে বিলীন হয়ে যায় বিজ্ঞান ভবন আর লাইব্রেরি ভবন।
কিন্তু বিদ্যালয়ে ৫টি শ্রেণিকক্ষ থাকায় বিপাকে রয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় স্কুল মাঠে এবং শ্রেণি কক্ষে কুকুর-বিড়াল এবং গরু ছাগল হাঁস-মুরগি ঢুকে পড়ে। যার ফলে পাঠদান ব্যহত হয়। বিদ্যালয়ের তিন পাশে নদী এক পাশে সরকারি রাস্তা। নদীতে নৌযান চলাচলের শব্দ আর সড়কের যানবাহনের শব্দে মনোযোগের বিঘ্ন ঘটে। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।
অথচ এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর অভাব নেই, কিন্তু শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তাই যত দ্রুত সম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে তার স্থলে নতুন একটি বহুতল নির্মাণের আবেদন তাদের।সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আফসার আহমেদ বলেন, নদীতে বিজ্ঞান ভবন আর লাইব্রেরি ভবন এবং কমন রুম বিলীন হয় ২০১৭ সালে। আমরা একটি নতুন ভবন চাই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বসার মতো কোন স্থান না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে আছি আমরা। নতুন করে ভবন নির্মাণ না হলে, পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙা প্রয়োজন। তা নাহলে, যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও বিদ্যালয়ে একটি বাউন্ডারি ওয়াল খুবই জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিদ্যালয়ের সভাপতি সগির সিকদার বলেন, পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত ভাঙা প্রয়োজন এবং আমাদের এখানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই শ্রেণিকক্ষের সঙ্কট সমাধানের জন্য জরুরিভিত্তিতে নতুন ভবন প্রয়োজন। এছাড়াও গরু ছাগল এবং বখাটেদের আনাগোনা বন্ধ করার জন্য বাউন্ডারি ওয়াল অতিব জরুরি। এ ব্যাপারে হিজলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মহি উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কার করার জন্য নতুন কমিটির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।