ভূঁইয়া কামাল, মুলাদী , বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৬ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা করার দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও ভবনটি নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে ১৯ শয্যার ভবনে চিকিৎসা
সেবা চলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও ডাক্তারগণ। বেশিরভাগ সময়ই হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। ডাক্তারগণ একই কক্ষে ২-৩ জন বসে রোগী দেখেন ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০০৬
সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতির ভিত্তিপ্রস্তর
স্থাপন করেন সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ওই সময় নানান
জটিলতায় ১৯ শয্যা ভবন নির্মাণে বিলম্ব হয়। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য
প্রকৌশল অধিদপ্তর হাসপাতালের ৩১ শয্যা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে
পরিবার কল্যাণ ভবনে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৭
সালে ১৯ শয্যা ভবনের কাজ শেষ হলে সেখানেই চলছে রোগীর চিকিৎসা
সেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইয়েদুর
রহমান বলেন, ২০২০ সালে হাসপাতালের পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে ৩১ শয্যার নতুন
তিনতলা ভবন বরাদ্দ হয়। ঠিকাদার কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ওই সময়ে কাজ
শুরু করেনি। বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানোর পরে
ঠিকাদার ২০২২ সালে কাজ শুরু করে।
২০২৪ সালের ৩০ জুন ভবনটি হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার
কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ পাইলিং এবং কয়েকটি পিলারের আংশিক
কাজ করে ফেলে রেখেছেন। আজও ৫০ শয্যার ভবনটির কাজ বন্ধ। ভবন না
হওয়ায় ১৯ শয্যার হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি করে
চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে রোগী, চিকিৎসক ও সেবিকাদের
(নার্স) অনেক সমস্যা হচ্ছে। একই কক্ষে ২-৩ জন ডাক্তার বসে
বহির্বিভাগের রোগী দেখতে হচ্ছে। বেড অকুপেন্সি রেট সব মাসেই
১১০-১২০% থাকে। ২৯ জন ডাক্তারের স্থানে হারবাল ও ডেন্টাল ডাক্তারসহ
রয়েছে ১২জন। এরমধ্যে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেয় মাত্র ৮জন ডাক্তার।
লোকবলের অভাবে এক্সে-বিভাগের কাজ হচ্ছে না।
হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ হামিদা বলেন, ১৯জন রোগীর
জায়গায় ৫০জন রোগীর চিকিৎসা দিতে নার্সদের খুবই কষ্ট হচ্ছে
এমনকি রোগীর চাপ বেড়ে গেলে হাঁটার জায়গাও থাকে না।
মুলাদী হাসপাতালে এসে রোগীর সেবা প্রদানে যেন কোন রকম
হয়রানির স্বীকার না হয় সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল
চলাকালিন হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে হাসপাতালের কর্মচারী মহিউদ্দিন
কিছুক্ষণ পরপর ঘোষণা দিতে থাকে আপনারা যারযার লাইনে
(মহিলা/পুরুষ) সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবেন। কোন ক্লিনিকের লোকজন
ভিতরে দাঁড়াতে পারবেন না এবং হাসপাতালের চারেপাশে থাকতে পারবে
না।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্বে
নানা অব্যবস্থাপনা এবং অপ্রতুলতার কারণে একটা সময় স্বাস্থ্যসেবা
বিঘিœত হলেও বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
ডা. মোঃ সাইয়েদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে পটপরিবর্তন
হতে থাকে। তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি, উৎসাহ এবং দক্ষ প্রশাসনিক
পরিচালনা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ ফিরে এসেছে।
উল্লেখ্য মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও
রোগীদের উন্নত সেবা প্রদান করায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা
কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাইয়েদুর রহমান জনপ্রশাসন পদক ‘কাইযেন-
২০১৭’ লাভ করেন।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনটির কাজ শেষ করাতে
পারলে তিন উপজেলার শতশত রোগী ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।