শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

সোনাকাটা ইকোপার্ক হারাচ্ছে পর্যটক, রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

বরগুনার তালতলী উপজেলার সংরক্ষিত ফাতরার বনে সরকার নির্মিত ‘সোনাকাটা ইকোপার্কটির বেহাল দশা। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ আর সংস্কারের অভাবে ইকোপার্কের ভেতরে ভাঙা রাস্তা ও সেতুর পাটা ভেঙ্গে অ্যাপ্রোচ সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলাফেরার ভোগান্তিতে আগ্রহ হারাচ্ছে দর্শনার্থীরা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইকো-ট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২অর্থবছরে ২কোটি ৬৩লাখ ১৩হাজার টাকা ব্যয়ে বনভূমির ভিতরে ৬৩৪একর জমির উপর একটি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সময় বনের ভেতর পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয় বনভোজনের স্থান, চলাচলের জন্য বনের ভেতরে ছোট ছোট খালের ওপর ১৬টি কাঠের সেতু, চারটি গভীর নলকূপ, চারটি শৌচাগার, চারটি বিশ্রামাগারসহ সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ইটের সড়ক। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১২বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের দৃশ্যমান সংস্কার করা হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেংরাগিরি ইকোপার্কে প্রবেশের আগেই সকিনা খালে নির্মাণাধীন ব্রিজটির উচ্চতা কম ও অ্যাপ্রোচ সড়কের এলজিইডির দেয়া ডিজাইনটি সঠিক না হওয়ার অভিযোগে প্রায় আড়াই বছর ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
এতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা পড়ছে চরম ভোগান্তিতে। কিছু পর্যটক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় ইকোপর্কে প্রবেশ করলেও আবার কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন। পার্কে চলাচলের সুবিধার্থে ছোট ছোট খালের ওপর নির্মিত সেতুগুলোর পাটা উঠে যাওয়ায় সেতু এবং সড়কের ইট উঠে যাওয়ায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইকোপার্কের ভিতরে গভীর নলকূপ অকেজো, শেচৗাগারের দরজা-জানালা ও বেসিন ভেঙে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বন্যপ্রাণীদের থাকার স্থানের চারপাশে নির্মিত লোহার গ্রিলে মরিচা ধরে ভেঙে গেছে এবং দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। ইকোপার্কের ভেতরে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়াও বনের ভেতরে চিতা বাঘ, হরিণ, শূকর, অজগর ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, কুমির, কাঠবিড়ালী, বানরসহ নানান প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে হুমকিতে।

ফেনী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নাহিদ হোসেন বলেন, এই ইকোপার্কে ঢুকতে হলে বড় একটি খাল ডিঙি নেকৗায় পার হতে হয়। এতে সাঁতার না জানা পর্যটকের জন্য জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ইকোপার্কে প্রবেশের নির্মাণাধীন ব্রিজটির কাজ সম্পন্ন হলে ভ্রমণে আরো আনন্দ পাবে পর্যটকরা।

টাঙ্গাইল থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আশ্রাফ আলী বলেন, পার্কের ভেতরের পরিবেশ খুবই নাজুক। হাঁটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে পর্যটকদের। খাবার পানির ব্যবস্থা নেই, শৌচাগার ব্যবহার অনুপযোগী।

পরিবেশকর্মী আরিফ রহমান বলেন, ইকোপার্কটিতে একসময় বিপুলসংখ্যক পর্যটক ঘুরতে আসত। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে পর্যটনকেন্দ্রটি পর্যটকদের আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ইকোপার্ক সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত সংস্কার করা হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রদত্ত ডিজাইন পরিবর্তনের অভিযোগে এতোদিন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কয়েক দফা তদন্ত শেষে পূর্বের ডিজাইন সঠিক বলে মত দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই পূর্বের ডিজাইনে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, আমি ইকোপার্কটি পরিদর্শন করেছি। এটিকে পর্যটকবান্ধব করার জন্য শীঘ্রই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *