নিয়ামুর রশিদ শিহাব
২০২৪ সালের ৬ই জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই দিনই আসে ‘বাংলা ব্লকেড’ এর ঘোষনা। এ দিন সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও প্রধান মহাসড়কগুলো অবরোধ করে রেখেছিল শিক্ষার্থীরা। কোটা আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি ।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ ঘোষনা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এর অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। এই দিন দুপুরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সমবেত হয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে দুপুর দুইটা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হল ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যানারসহ গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়েছিল। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবস্থান করে বিকাল পৌনে পাঁচটা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা শাহবাগ অবস্থান করেন আন্দোলনকারী। শিক্ষার্থীদের মিছিলটি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের মোড় হয়ে বকশিবাজার, বুয়েট, পলাশী মোড় হয়ে ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিক্স, নীলক্ষেত থেকে পুনরায় রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়েছিল। মিছিলে শিক্ষার্থীদের কোটা না মেধা, মেধা মেধা; কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; হাইকোর্ট না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ; দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ ইত্যাদি ¯স্লোগান দিয়েছিল ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
কোটা আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে এই দিন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন- আমরা মনে করি কোটা প্রতিবন্ধী, নৃজাতী সহ পিছিয়ে পড়াদের জন্য থাকতে পারে, তবে ৫৬ শতাংশ নয়। এটা বড়জোর ৫ থেকে ১৫ শতাংশ কতে হারে।
কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইনকে ‘বিতর্কিত কর্মকান্ডে’ সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে অব্যাহতি দিয়েছিল মডারেটর ও বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনের ২১ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেছিল।
২০২৪ সালের ৬ই জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। এর আগে কাঁঠালতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস চত্বরে জড়ো হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল। তাদের দাবী আদায় না হলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছিল। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষার্থীরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছিল। এতে নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা ও ছাত্রসমাবেশ করেছিল। তারা রংপুর ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। এতে সড়কের দুই পাশে প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টাঙ্গাইল সড়কের আশেকপুর বাইপাসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। শিক্ষার্থীদের এই দিনের আন্দোলন সরকারকে চাপে ফেলতে ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করতে সাহায্য করেছিল।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।