শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ, প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনা

‎সোলায়মান তুহিন গৌরনদী প্রতিনিধি।। 

‎ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। পদ্মা সেতু চালুর পর এই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০হাজার ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে এই সড়কে। অথচ বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগরীর সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৪৬কিলোমিটার সড়কজুড়ে অসংখ্য গর্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে এটি এখন এক ভয়াবহ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

‎রবিবার (৩আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে, রাস্তার একাধিক স্থানে মাটি দেবে গেছে। কোথাও কোথাও বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যার ওপর দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। রাস্তার গায়ে কোথাও ইট-বালু দিয়ে সাময়িকভাবে গর্ত ভরাট করা হলেও তা কিছুদিনের মধ্যেই উঠে গিয়ে ফের পুরনো রূপে ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ভুরঘাটা, বার্থী, টরকি, গৌরনদী, মাহিলাড়া, বাটাজোড়, বামরাইল, জয়শ্রী এলাকায় রাস্তার অবস্থা আরও ভয়াবহ। গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে গর্তগুলো সহজে চোখে পড়ে না, ফলে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও অন্যান্য হালকা যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

‎রাস্তার এই বেহাল অবস্থায় যান চলাচলে সময় লাগছে দ্বিগুণ। শুধু সময় নয়, অতিরিক্ত তেলের খরচ এবং যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে যাত্রীসেবায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটছে নিয়মিত।

‎গৌরনদীর স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বারবার সংস্কার করা হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই আবার রাস্তা ভেঙে যায়। এর মানে একটাই—নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ হচ্ছে।”

‎সাকুরা পরিবহনের সুপারভাইজার মো. সজল বেপারী বলেন, “ঠিকাদাররা নিম্নমানের পাথর, পিচ ও বিটুমিন ব্যবহার করেন। কোনো মান নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণেই সংস্কার শেষ হতে না হতেই আবার রাস্তা ভেঙে যায়।”

‎পিকআপ চালক আব্দুল হক বাবু বলেন, ‎“প্রতিদিন গৌরনদী থেকে মালামাল নিয়ে বরিশালে যাই। রাস্তার যা অবস্থা, মনে হয় কখন যে গাড়ি উল্টে যাবে আর জীবনটা এখানেই শেষ হবে। পেটের তাগিদে গাড়ি চালাতে হয়, কিন্তু প্রাণ হাতে নিয়ে চালাতে হয়। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় দুর্ঘটনা অনিবার্য।”

‎এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “দুর্ভোগ লাঘবে আমরা সড়কের গর্তগুলো ভরাট করছি। আমাদের নিজস্ব শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। তবে বর্ষার কারণে গর্ত বেশি হচ্ছে।

‎প্রতিবছর এই মহাসড়কের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এই টাকার সিংহভাগ ব্যয় হয় কাগজে-কলমে। মাটিতে তার প্রভাব পড়ে না। সড়ক সংস্কারের নামে চলছে অসাধু ঠিকাদারদের ‘লুটপাট উৎসব’। ফলে জনগণের টাকায় তৈরি হওয়া অবকাঠামো টিকছে না কয়েক মাসও।

‎বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার মানুষ নিয়মিত এই মহাসড়ক ব্যবহার করেন। এ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলার মানুষও পদ্মা সেতু পার হয়ে এই রুটেই ঢাকায় যাতায়াত করেন। অথচ মহাসড়কটির উন্নয়ন হয়নি যুগোপযোগীভাবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতি।

‎এখন প্রশ্ন উঠেছে, বছরের পর বছর সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কেন টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না? কীভাবে একই স্থানে বারবার সংস্কারের প্রয়োজন হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে দুর্নীতির চক্রে।
‎দ্রুত সড়কের পূর্ণাঙ্গ, মানসম্মত সংস্কার না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি আরও বাড়বে, যার দায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনকেই নিতে হবে।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *