নিজস্ব প্রতিবেদক :
নতুন এই বাংলাদেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে চুল পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দৈনিক বাংলাদেশ বাণীর সম্পাদক ও প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে নতুন আঙ্গিকে পত্রিকাটির প্রকাশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তারা।
এসময় আমন্ত্রিত অতিথিরা গত সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের অপশাসন, স্বৈরাচারী আচরণ আর গণমাধ্যমকে কুক্ষিগত করে রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণমাধ্যমকে ভয়াবহভাবে অপব্যবহার করে গণমানুষের বিরুদ্ধে দার করানো হয়েছিল উল্লেখ করে তারা বলেন, আর কোনোভাবেই যেন এ ধরনের অপশাসন চেপে বসতে না পারে।
বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী আল মামুন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা তাদের সঙ্গে ছিল, তেল দিয়ে চলেছেন শুধুমাত্র তারাই ভালো ছিলেন। এছাড়া বাকি সবাই ভুক্তভোগী ছিল। সামান্যতম মতের বাইরে গেলেই তাকে অমানবিক আচরণ সহ্য করতে হয়েছে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে যেই মতের হোন, যেই দলের হল সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নিরপক্ষেতা বজায় রাখুন। তাহলে আমলা বলেন, প্রশাসন বলেন, ব্যবসায়ী বলেন আর জনপ্রতিনিধি বলেন- সবাইকে সঠিক জায়গায় আসতে হবে।
বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ বাণী যারা প্রকাশনার দায়িত্ব রয়েছেন তারা কাউকে উঠাবে না, কাউকে নামাবে না, কাউকে তেল দেবে না। তারা প্রকৃত সংবাদই প্রচার করবে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। একই সঙ্গে তিনি অন্যান্য পত্রিকাগুলোকেও সঠিক সাংবাদিকতার চর্চা করার আহবান জানান।
গত ১৬ টা বছর গণমাধ্যম ভয়াবহ ও কঠিন সময় পার করেছে মন্তব্য করে বরিশাল সংস্কৃতিকেন্দ্রের সভাপতি প্রফেসর মাহমুদ হোসাইন দুলাল বলেন, বিগত দিনের কথা ভুলে গিয়ে নতুন বাংলাদেশে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে।
প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ বলেন, দিন পাল্টে গেছে, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সকল খবরই মানুষ দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে সংবাদপত্র প্রকাশ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশ বাণী এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর পিতা মো. জাকির হোসে বলেন, আমার সন্তান কোনো দলের জন্য নয়, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য শহীদ হয়েছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জীবন দিয়েছে। এজন্য আমি আহবান জানাই- এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে, যারা অংশ নিয়েছে তাদের বিষয়ে সজাগ থাকবেন। তাদের বিষগুলো তুলে ধরবেন, কোনোভাবেই তারা যেন বৈষম্যের শিকার না হয়।
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল বরিশাল’র সুপারিনটেনডেন্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. আলতাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি, স্বধীন দেশও পেয়েছি। কিন্তু পরবর্তি সময় লজ্জিত হয়েছি যখন দেশে বাকশাল কায়েম করা হয়, লজ্জিত হয়েছি যখন রক্ষিবাহিনী গঠন করা হয়, লজ্জিত হয়েছি যখন দেশের সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক আপর্না আক্তার বলেন, আমরা এত ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের সময় পার করেছি, তখন দেশের অধিকাংশ মিডিয়া আমাদেরকে প্রকৃত তথ্য জানতে দেয়নি। আমরা জানতেও পারিনি আমাদের কোন ভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে। ২৪ এর স্বধীন দেশে আর যেন মিডিয়ার এমন খারাপ সময় না আসে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত বিএম কলেজ বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ সিকদার সাব্বির বলেন, বাংলাদেশ বাণীর কাছে আহবান থাকবে যাতে আন্দোলনে আহত ও নিহতদের সব ধরনের খবর যেন সংবাদপত্র থেকে হারিয়ে না যায়।
সভাপতির বক্তব্যে, বাংলাদেশ বাণীর প্রকাশক আ্যডভোকেট শাহ আলম বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে এক চুল পরিমাণও ছাড় দেব না। এক্ষেত্রে যত বড় ক্ষমতাবানই হোকনা কেনো। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে শতভাগ নিরপেক্ষতা রক্ষা করে চলবো ইনশাআল্লাহ।
পরে ফিতা কেটে নতুন আঙ্গিকে বাংলাদেশ বাণীর প্রকাশনার উদ্বোধন করেন শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত’র পিতা মো. জাকির হোসেন।
অনুষ্ঠানো আরো বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ বাণীর উপদেষ্টা সম্পাদক কাজী মনজুর হোসেন, দৈনিক বরিশাল বার্তার সম্পাদক আলহাজ নুরুল আমীন, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আক্কাস সিকদার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিএম কলেজের সমন্বয়ক নাহিদ আলম ও লাবন্য রহমান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সিরাজুল ইসলাম,
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক আজকের বরিশালের সম্পাদক আলহাজ খলিলুর রহমান, বিসিসির সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন মাসুমসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ বাণীর সম্পাদক আযাদ আলাউদ্দীন।