শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

পটুয়াখালীতে পরীক্ষার ফী দিতে না পারায় শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের গালমন্দের প্রচারনা মিথ্যা ও বানোয়াট

মনজুর মোর্শেদ তুহিন।।

প্রি টেস্ট পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় পটুয়াখালীর সদর উপজেলার নৌকরণ ইউনিয়নের শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী হারুন অর রশীদ ও সহকারী শিক্ষক অমল চন্দ্র দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তামান্না আক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদপত্রে যে প্রচারনা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

শোনাযায়, কিসমত মৌকরন নিবাসী আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী তামান্না আক্তার  প্রি-টেস্ট পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় ৪ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক ও সহঃ শিক্ষক অমল চন্দ্র তাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। তামান্না লজ্জায় বাড়ি গিয়ে রুমের দরজা আটকিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নাহত্যার চেষ্টা করছিল। এ সময় টের পেয়ে স্বজনরা দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে  হাসপাতালে ভর্তি করে।  উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে বরিশাল মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

তবে ওই দিনের বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে তামান্না আক্তার ও তার সহপাঠী এবং শিক্ষকদের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। তামান্না আক্তার পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় তাকে প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণি শিক্ষক যে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা অসত্য প্রচারনা। স্থানীয় কিছু লোক তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য এ মিথ্যা তথ্য উপস্থান করেছে।
শিক্ষকদের গালমন্দের বিষয়ে তামান্না আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সারারাত জেগে পড়াশোনা করায় শরীর খারাপ ছিল। পরীক্ষার ফি আনতে পারিনি। স্যার বারবার টাকা চাইছিলেন, আমি কিছু না বলে বাড়ি চলে আসি। স্যাররা আমাকে বকাবকি করেনি। কিন্তু বাড়িতে আসার পর মা রাগ করায় আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি।

তার মা রিনা আক্তার জানান, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ি ফেরায় আমি রাগ করে ওকে বকেছি। তখনই সে দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তবে কোনো ক্ষতি হয়নি, এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে। শিক্ষকদের এ জন্য দোষারোপ করার কিছু নেই।

এবিষয়ে তামান্না আক্তারের সহপাঠী সানিয়া, মাহিন ইসলাম ও হাচান হাওলাদার ও অন্যাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, পরীক্ষার কিছু দিন পূর্বে সবাইকে তাদের ক্লাস টিচার পরীক্ষার ফি ও বকেয়া বেতন দেওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু বেশ কয়েক জন তা দিতে পারে নাই। কিন্তু তারা হেড স্যার ও ক্লাস টিচারের পারমিশন নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। কিন্তু তামান্না কোন প্রকার পারমিশন ছাড়াই পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিতে গেছে। ক্লাস টিচার অমল চন্দ্র স্যার ও হেড স্যার যখন পরীক্ষার হলে এসে বলে যারা যারা পরীক্ষার ফি দেয়না তারা দাড়াও, তখন অনেকে দাঁড়ালেও সে দাড়ায় নি। তখন অলম স্যার তামান্নাকে উদ্দেশ্য করে বলে তুমিওতো ফি দাওনি তবে দাড়াওনি কেন। তখন প্রধান শিক্ষক বললো তুমি ফি দেওনি এবং আমাকে বা শ্রেনী শিক্ষককেও বলোনি কবে ফি দিতে পারবে, তাহলে পরীক্ষা দিবে কিভাবে। শিক্ষকদের এ কথা শুনে কোন উত্তর না দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বিরিয়ে যায় তামান্না। হেড স্যার বা অমল স্যার তাকে কোন গালমন্দ করে নাই।

এ ঘটনার বিষয়ে শ্রেনী শিক্ষক অমল চন্দ্র জানান, সে আমাদে বিদ্যালয়েরর ছাত্রী আমাদের মেয়ের মতো তাকে কেন গালমন্দ করবো। সে পরীক্ষার ফি দিতে পারে নাই ভালো, এরকম অনেকেইতো দিতে পারে নাই তারাতো সবাই পরীক্ষা দিয়েছে। তাকে বলা হয়েছে পরীক্ষার ফি দিতে পারনাই সবাইকে দাড়াতে বললাম অন্যারা দাড়ালো তুমি কেন দাড়াওনি। পরীক্ষার ফি না দিলে পরীক্ষার দিবে কিভাবে। সে কোন প্রকার উত্তর না দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে বাড়ী চলে যায়।

প্রধান শিক্ষক কাজী হারুন অর রশিদ জানান, তাকে কোন প্রকার গালমন্দ করা হয় না। আপনারা তার সহপাঠীদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। পরীক্ষার ফি না দিয়ে পরীক্ষা দিবে কিভাবে এ কথা বলায় সে কোন উত্তর না দিয়ে পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। তাকে বার বার ডাকার পরেও সে কোন কর্ণপাত না করে বাড়ী চলে যায়। তারপর বাড়ী কি হয়েছে আমরা জানিনা। পরে জানতে পারি পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ী চলে যাওয়ায় তার মা তাকে বকাবকি করায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ কথা শুনে আমরা দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। সে বর্তমান সম্পূর্ণ সুস্থ্য আছে।

আরো পড়ুন

ঝালকাঠিতে খবরেরকাগজ ‘বন্ধুজন’ জেলা কমিটি গঠন

জাহাঙ্গীর আলম।। দৈনিক খবরের কাগজ–এর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধুজন’–এর ঝালকাঠি জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *