শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

‎নাজিরপুর সেতু উদ্বোধনে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা: প্রশাসনের সামনে ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
‎বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলাধীন আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস (PSRB) প্রকল্পের আওতায় নির্মিত নাজিরপুর সেতুর উদ্বোধন ঘিরে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে উত্তেজনা, বিশৃঙ্খলা এবং পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। দুপুরের মধ্যে সেতুর উদ্বোধনী মঞ্চে জমতে শুরু করে স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা। এ সময় আকস্মিকভাবে একদল দুষ্কৃতিকারী হামলা চালিয়ে মঞ্চ ও আশপাশের স্থাপনায় ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। ‎ঘটনার পর এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক।

‎প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়—উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে হঠাৎ করে ৬০ থেকে ৮০ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ দ্রুতগতিতে মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের আচরণ, দেহভঙ্গি ও নির্দেশনার ধরন দেখে স্থানীয়রা প্রথমেই বুঝতে পারেন—এটি পূর্বপরিকল্পিত। ‎তারা মুহূর্তেই মঞ্চে উঠে চেয়ার–টেবিল, ব্যানার–ফেস্টুন ও সাউন্ড সিস্টেমে ভাঙচুর চালায়। একইসঙ্গে আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষকে ধাওয়া করলে উপস্থিতদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

‎হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. খয়রুল আলম সুমন, মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ‎কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীলদের ভূমিকা ছিল ‘উদ্বেগজনকভাবে নীরব’। ‎তারা তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের প্রতিরোধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেননি, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

‎হামলার সময় মাত্র ৪–৫ জন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের ওই দলকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে পুলিশ ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ এবং হামলাকারীদের পরিচয় উদ্ঘাটনে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

‎স্থানীয় প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে দেখছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন মুজিব কোট পরা পরিচিত মুখ ছিল। ‎এছাড়া হামলার নেতৃত্ব অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব (অর্থ মন্ত্রণালয়) এমদাদুল হক মজনু, নৌকা প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি জাহিদ হোসেন পনির। ‎এই অভিযোগের বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‎উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। এছাড়া বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. খয়রুল আলম সুমন, মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এলজিআরডি কর্মকর্তারা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

‎হামলার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়—পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ঘটনাপরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন—দুষ্কৃতিকারীদের পরিচয় জানা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে দেরি করেছে এবং পরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।‎ ‎এদিকে হামলার ঘটনায় স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করলেও বর্তমানে তারা দোষীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছেন।

‎নাজিরপুর সেতুটি আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। PSRB প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই সেতু চালু হলে কয়েকটি ইউনিয়ন ও গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে, বাড়বে অর্থনৈতিক কার্যক্রম।
‎এই জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে এমন সন্ত্রাসী হামলাকে স্থানীয়রা উন্নয়নবিরোধী অপতৎপরতা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

‎‎নাশকতার এই ঘটনায় মুলাদী অঞ্চলে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। প্রশাসনের নীরবতা, হামলাকারীদের পরিচয় এবং পরিকল্পিত নাশকতার অভিযোগ—সব মিলিয়ে ঘটনাটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা—দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে এ ধরনের নাশকতার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হোক।

আরো পড়ুন

নগরীর কাঞ্চন পার্কের ১৫টি গ্রিল চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের বিএম স্কুল সংলগ্ন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান কাঞ্চনপার্ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *