নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘদিন ধরেই বরিশাল নগরীতে একের পর এক হানিট্রাফের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী যুবক। তাদের থেকে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবশেষে সেই চক্রের সন্ধান মিলেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর ভাটিখানা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজন নারী এবং অপরজন ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ধারী।
চক্রের আটককৃত সদস্যরা হলেন- উজিরপুর উপজেলার নয়কান্দি গ্রামের নিয়াজ বিশ্বাসের স্ত্রী নিশি আক্তার (১৯)। তিনি বরিশাল নগরীর কাউনিয়া সাধুর বটতলা এলাকার মোল্লা বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন।
অপরজন নিউ ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা নোহান ইসলাম রিমন (২০)। তিনি নিজেকে অনুসন্ধান বিডি টোয়েন্টিফোর এবং ডেইলি বরিশাল সংবাদ নামের একটি নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক পরিচয় দেন। এসময় তার কাছ থেকে একটি মাইক্রোফোন (বুম) ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এর আগে নগরীর এক যুবককে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে হানিট্রাফে ফেলে ৫২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
শনিবার বিকালে নিউ ভাটিখানা এলাকার ভাড়াটিয়া তানিয়া আক্তার জানান, গত তিন মাস ধরে তিনি ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বাড়িটি রুনা নামের একজন দেখাশুনা করেন। তিনিই এই বাড়ির মালিক। শুনেছি তার ভাই রানা কোনো এক মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছে। গত তিন মাসে এই বাসায় এমন অনেক নারী-পুরুষকে আসতে দেখেছি। কিন্তু ধরা পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম। তবে ঘটনার পর বাড়ির মালিক রুনাসহ অন্য কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে- দু’জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হানিট্রাফ চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য। আটক নিশি আক্তার জানান, তার চক্রের মূল হোতা নীলা পাখি নামের এক তরুণী। তার সাথে রয়েছে বৃষ্টি, সামিয়া নামের তিন তরুণী। এছাড়াও সাতরাজ, সার্জিস, রিমন এবং ভাটিখানা এলাকার শাহিনসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা এই চক্রের সদস্য।
নিশি জানায়, হানিট্রাফ চক্রের কাজ হচ্ছে বিবাহীত এবং অবিবাহিত যুবকদের ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুবিধামত জায়গায় নিয়ে আসা। আর এই কাজটি করেন নীলা পাখি এবং বৃষ্টি। পরে অন্য মেয়েদের সাথে রুমে পাঠিয়ে চক্রের অন্য সদস্যদের খবর দেয়া হয়। ওইসব ব্যক্তি বা যুবকদের ফাঁদে ফেলার মূল কাজটি করে থাকে সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা।
তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বুম নিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে চাহিদা অনুযায়ী টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা লেনদেনও করেন তারা। যুবককে ফাঁদে ফেলে ৫২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে নিশি বলেন, শনিবার বিকেলে যাকে নিয়ে ঘটনা তার সাথে যোগাযোগ করেছিল সৃষ্টি। বৃষ্টিই আমাকে ওই যুবকের মোবাইল নম্বর দিয়ে কাজ করতে বলে।
নিশি জানায়, পূর্বে চার হাজার টাকা বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো সে। সেখান থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে এই চক্রে ভেরেন তিনি। তাকে চক্রের কার্যক্রম শিখিয়ে দেয় অপর সদস্য সামিয়া। অভাবে পড়ে তিনি এই পেশায় জড়িয়েছেন বলেও দাবি নিশির।
আটক অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া বরিশাল মেট্রোপলিটনের স্টিমারঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই এমন অপকর্ম করে আসছিল। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় চক্রটিকে আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী এক যুবক বাদী হয়ে থানায় মামলার আবেদন করেছেন। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।