বুধবার, ডিসেম্বর ১০, ২০২৫

তফসিলের আগেই রাজনৈতিক সহিংসতা; বাড়ছে উদ্বেগ-উত্তেজনা

ফাহিম ফিরোজ

চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। আর তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা ও মুলাদীতে ধারাবাহিক সহিংসতায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ঝালকাঠির নলছিটির মোল্লারাট এলাকায় জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় রাজনৈতিক একটি পক্ষ। একইদিন বরিশাল নগরের কাশীপুর হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় বিএনপি–সমর্থিত সাবেক কাউন্সিলর ও তার অনুসারীদের হামলায় আহত হন এক জামায়াত কর্মী।

গত ৫ ডিসেম্বর বিকালে বাউফলের কনকদিয়া বাজারে বিএনপির হামলায় জামায়াত নেতা রাসেদুল ইসলাম রাসেদ গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় সে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

এর আগে ৭ ডিসেম্বর মুলাদীর মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে মারধর করে ছাত্রদলের একটি অংশ। তারও আগে ভোলার বোরহানউদ্দিনে জামায়াত কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে।

শুধু হামলা নয়—বিভিন্ন সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিস্ফোরক বক্তব্যও দিচ্ছেন নেতারা। ভোলার এক জনসভায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, “২০০০ সালের মতো জামায়াতকে ধরে ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে হবে।”

এদিকে গৌরনদীর একটি ওয়াজ মাহফিলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার আলম বলেন, “আর যাকে ভোট দেন, জামায়াতকে ভোট দিয়েন না।” এ মন্তব্যের পর অনেক মুসল্লি সভা ত্যাগ করেন বলে জানা যায়। তখন তিনি আরও বলেন, “আপনাদেরকে চিনে রাখলাম।”

এ ছাড়া ২ ডিসেম্বর ইসলামী সমমনা ৮ দলের বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন—একসময় বিএনপি–জামায়াত ছিল জোটের শরিক; এখন তারা একে অপরের ‘চীরশত্রুতে’ পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অনুকূল নয়। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, গণতান্ত্রিক পার্টিসহ ইসলামী সমমনা ৮ দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় বিএনপি সহ অন্যান্য দল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নতুন করে চ্যালেঞ্জ অনুভব করছে।

গত ৮ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েছে; নির্বাচনী সহিংসতা আরও বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল অঞ্চল পরিচালক অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, “ভোট সামনে রেখে যেভাবে হামলা, হুমকি ও বাধার ঘটনা ঘটছে—তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত অশুভ সংকেত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন নয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমান অধিকার নিশ্চিত করলেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।”

তিনি আরও জানান, সহিংসতা উসকে না দিয়ে সকল রাজনৈতিক পক্ষের উচিত সহনশীলতা বজায় রাখা এবং প্রশাসনের উচিত নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

 

আরো পড়ুন

আগৈলঝাড়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি ‎বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস–২০২৫ উপলক্ষে জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *