অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মা-মেয়ে জোড়া হত্যার প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি স্বামীর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা।
পুলিশ জানায়, আজ দুপুর ১২টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হত্যার দায় স্বীকার করেন আয়েশা। এ ব্যাপারে তার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
পুলিশের সূত্র আরো জানায়, ঘটনার দিন বাসার মালপত্র চুরি করে নেওয়ার সময় লায়লা আফরোজের কাছে আয়েশা ধরা পড়েন। এক পর্যায়ে লায়লা আফরোজ তাকে আটকে পুলিশে ফোন দিতে গেলে আয়েশা ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করেন।
মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে মেয়ে নাফিজা বিনতে আজিজ দৌড়ে ড্রয়িংরুমে এসে মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। ওই সময় গৃহকর্মী তাকেও ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করেন, এরপর স্কুল ড্রেস পরে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তারের সময় আয়েশার থেকে ৬ ভরি স্বর্ণ, একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন ও হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে নলছিটি থানার ওসি আশরাফ আলী বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি নলছিটি এলাকায় তার দাদা শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।’ পুলিশ জানিয়েছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা আসামি আয়েশার সঙ্গে তার স্বামী রাব্বীকেও গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে। স্বামীর দেওয়া তথ্যেই নলছিটি থেকে আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই আসামি আয়েশাকে নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। এডিসি মোহাম্মাদ জুয়েল রানা জানান, ক্লু-লেস এই জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ৬ মাস আগে মোহাম্মাদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার একটি বাসায় চুরিও করেছিলেন আয়েশা।
তদন্তে এমন আরো ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গৃহকর্মী আয়েশার একার পক্ষে হত্যার মতো এমন বড় কাজ করা সম্ভব নয় তাই তার স্বামী রাব্বীকেও আটক করেছে পুলিশ।
তেজগাঁও বিভাগের এডিসি মোহাম্মাদ জুয়েল রানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রথমে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে আয়েশার স্বামীকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নলছিটি থেকে হাতেনাতে আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আয়েশা বলেছে, কাজের পর আয়েশা যখন বাসা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন; তখন গৃহকর্ত্রী তাকে চুরি করার অভিযোগে দিয়ে আটকায় এবং তল্লাশীর চেষ্টা করেন। সে সময় হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আয়েশা কোপ দেয়। এ সময় গৃহকর্তীর চিৎকার শুনে তার মেয়ে ছুটে আসলে তাকেও একই অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে আয়েশা।
এর আগে গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে লায়লা ফিরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জোড়া হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।