বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু, কলাপাড়া প্রতিনিধি॥
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা চরগুলো এখন অতিথি পাখির অভয়ারন্য।
প্রতি বছরের ন্যায় শীত মৌসুমের শুরুর দিকে হাজারো রঙ-বেরঙের নানা প্রজাতির পাখি আসে। সীমানা পেড়িয়ে সাময়িক আশ্রয়স্থল হিসেবে চর বিজয়, গঙ্গামতির চর ও কাউয়ার চর এলাকা বেছে নেয় তারা। এদের মধ্যে রয়েছে রামঘুঘু, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, গাঙচিল, চখাচখি, বদর কবুতার সহ অসংখ্য বালিহাঁস। নাম না জানা নানা বর্ণের এই পাখির কল-কাকলিতে মুখরিত থাকে ওইসব চর। যেন এক নৈসর্গিক পরিবেশ। দিগন্তজোড়া আকাশ আর সমুদ্রের নীল জলরাশি আছড়ে পড়ছে কিনারায়। একই সাথে সাদা গাঙচিলের দল এদিক-ওদিক উড়ে যাচ্ছে। আর আগত পর্যটকরা উপভোগ করছেন পাখির ওড়াউড়ি। অবাধ বিচরণ আর ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো কিংবা দল বেঁধে পানিতে ভেসে চলার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করছেন অনেকে। আবার দর্শনার্থীরা কাছে যেতেই ঝাঁক বেঁধে কিচিরমিচির শব্দ করে এসব পাখি উড়ে যায় আকাশে।
পর্যটকরা জানান, সামাজিক সংগঠন ও সরকারের পক্ষ থেকে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সৃষ্টিতে পদক্ষেপ নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এই এলাকায় আরও বেশি পাখির আগমন ঘটবে। একই সঙ্গে এলাকাটি সুস্থ বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। পরিবেশবীদের মতে, এসব পাখি শীত প্রধান অঞ্চল থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কয়েক মাসের অতিথি হয়ে এ দেশে আসে। এরা মূলত বেশিরভাগই উপকূলীয় দ্বীপ এবং চরাঞ্চলগুলোতে আশ্রয় নেয়। তবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে পাখিরা ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন এবং মাটিকে উর্বর করে তোলাসহ জলজ পরিবেশকে সুন্দর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস এবং শিকারিদের ফাঁদে পড়ে এদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোড মালিক সমিতির সভাপতি মো.জনি আলমগীর বলেন, বর্তমানে সাগরে মাঝে জেগে ওঠা চরগুলো এখন অতিথি পাখির অভয়ারন্য। রঙ- বেরঙের নানা প্রজাতির পাখি দেখে আগত পর্যটকরাও মুগ্ধ হচ্ছে। তবে শীত মৌসুমের শুরুর দিকে এসব পাখি ওইসব চরগুলোতে আশ্রয় নেয় বলে তিনি জানান।
এনিমেল লাভার অব কলাপাড়া শাখার টিম লিডার মো.রাকায়েত আহসান জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ থেকে অতিথি পাখিরা এসেছে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত অতিথি পাখি রক্ষায় এগিয়ে আসা। আর এসব পাখির বাসস্থান রক্ষা করা। তারা অল্প কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছে। কোন ভাবেই তাদেরকে আহার হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর আমরা দেখতে পাই বিষটোপ ও ইয়ারগান সহ বিভিন্ন মাধ্যমে অতিথি পাখি নিধন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বে-আইনিভাবেই শিকার হচ্ছে এসব পাখি। যা দন্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে। এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি অতিথি পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ করে দখলে রাখে কিংবা বেচা-কেনা করে। তবে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে বলে জানা গেছে।